দেশে শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার যে চিত্র গতকালের শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে, তা শুধু হতাশার নয়Ñউদ্বেগেরও। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার বরাত দিয়ে এতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত চার বছরে সংযোগ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০৯ প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, খাতটির প্রতি কতটা উদাসীনতা দেখানো হয়েছে উল্লিখিত সময়ে। বলা বাহুল্য, এ সময়ে নতুন সংযোগের জন্যও জমা পড়েছিল আড়াই হাজারের বেশি আবেদন। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান শেয়ার বিজকে বলেছেন, ‘সচেতন অবস্থান থেকে উচ্চপর্যায়ের কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।’ বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন ঠিক কী কারণে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, তা আমরা জানি না। এর কোনো সদুত্তর কি প্রতিষ্ঠানটির কাছে রয়েছে? এক্ষেত্রে উৎপাদন ঘাটতির বিষয়কে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছেন কেউ কেউ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সঙ্গত কারণেই আরেকটি প্রশ্ন ওঠে, গ্যাসের এ সংকটকালে যে ১০৯ প্রতিষ্ঠানকে নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো অগ্রাধিকার পেয়েছে কীসের ভিত্তিতে?
আমরা জানি, জ্বালানি ছাড়া কোনো শিল্প-কারখানার উৎপাদনে আসা সম্ভব হয় না। আর প্রাকৃতিক গ্যাস এমন এক জ্বালানি, দেশের বাজারে যা তুলনামূলক সুলভ। এর সরবরাহে কালক্ষেপণ করলে উৎপাদনে আসতে বিলম্ব হয় শিল্প-কারখানার। স্থায়ী অবকাঠামো স্থাপনসহ বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে বসে থাকতে হয় শিল্পমালিককে। ফলে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই লোকসানের মুখোমুখি হন তারা। এ অবস্থাই সৃষ্টি হয়েছে উল্লিখিত ক্ষেত্রে। উদ্ভূত পরিস্থিতি যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। এদের কেউ কেউ যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারবেন না, সে আশঙ্কাও অমূলক নয়। এজন্য আমরা চাই, প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন পর্যালোচনাপূর্বক তাদের সংযোগ প্রদানের ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হোক। শিল্প-কারখানায় গ্যাসের অদক্ষ ব্যবহারের বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ শোনা যায় মাঝেমধ্যে। এজন্য সংযোগ প্রদানের সময় আবেদনকারী কারখানাগুলোকে সতর্কও করা হোক যথাযথভাবে।
নিকট অতীতে বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ আর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার। এজন্য দামও বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল তখন। প্রসঙ্গত আগের বক্তব্য পুনরুল্লেখ করে আমরা বলতে চাই, রান্নার মতো সাধারণ কাজে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস করা উচিত ব্যাপকভাবে। এ লক্ষ্যে উৎসাহিত করা যেতে পারে এলপি গ্যাসের ব্যবহারকে। সিলিন্ডারে বাজারজাত করা গ্যাসের দাম কমানো গেলে লক্ষ্যটি অর্জন করা সহজতর হবে বলে মনে হয়। শুধু তা-ই নয়, জ্বালানিটির অপচয়ও কমবে এর মাধ্যমে। এতে রান্নার কাজে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার যতটুকু কমবে, সেটিও যোগ করা যেতে পারে শিল্প-কারখানায়।
জ্বালানির অভাবে কোনো শিল্প-কারখানা নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদনে আসতে না পারার ক্ষতি শুধু উদ্যোক্তার নয়, আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির। উল্লিখিত কারখানাগুলো চালু হলে শুধু উৎপাদন বাড়বে না, কর্মসংস্থানও হবে। বাস্তবতা হলো, ওসব কারখানা ঘিরেও হবে নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এক সঙ্গে আড়াই হাজার শিল্প-কারখানা নতুনভাবে উৎপাদনে আসার প্রভাব অর্থনীতিতে কতটা ইতিবাচকভাবে পড়তে পারে, তা কি ভাবনায় আছে নীতিনির্ধারকদের? এজন্যই উপযুক্ত কারখানাগুলোর আবেদন গুরুত্বের সঙ্গে নিতে বলবো কর্তৃপক্ষকে। বস্তুত গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক না থাকলেও ব্যাহত হয় উৎপাদন। সেজন্য শুধু সংযোগ দিলে হবে না, গ্যাসের যথাযথ চাপ যাতে বজায় থাকে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত ক্ষেত্রগুলোয় গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। এজন্য আমরা এটাও চাইবো, দেশের বিভিন্ন ব্লকে সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করুক পেট্রোবাংলা। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এ জ্বালানির ব্যবহার কৌশলে যতটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়, ততই মঙ্গল।
Add Comment