শিল্প খাতে ঋণের চাহিদা বেড়েছে

রোহান রাজিব: ঋণের চাহিদা বেড়েছে শিল্প খাতে। ফলে বেড়েছে বিনিয়োগ, তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাতের ঋণ বেড়েছে ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। একই সময়ে আদায় বেড়েছে ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কভিড মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি। এর ফলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শিল্প খাত। কভিড শুরুর পর ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম খারাপ অবস্থা তৈরি হয়। সে তুলনায় চলতি বছর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তাই বিভিন্ন সেক্টরের মতো শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হওয়ায় আদায়ও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৫৯৬ কোটি ৮২ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২.২৪ শতাংশ। জুন শেষে এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৮৪ কোটি ২ লাখ টাকা।

এদিকে শিল্পঋণ বিতরণের বিপরীতে আদায়ের হারের অবস্থাও ভালো।  বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণ আদায় হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১২৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা; যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ৮২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ আদায় বেড়েছে ১৮ হাজার ৪৯০ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর তিন মাসের ব্যবধানে আদায় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে বিতরণ করা শিল্পঋণের মধ্যে ছয় লাখ ৯১ হাজার ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এ অঙ্ক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৭ হাজার ৫৬০ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বকেয়া ছিল ছয় লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। শিল্প খাতে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণের অঙ্ক ৯৫ হাজার ৯৪৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ৮৪ হাজার ৮৩৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতের মেয়াদি ঋণ বিতরণ ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা বেড়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ১৪ হাজার ৮৩৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

বৃহৎ মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে মেয়াদি ঋণ বিতরণের অঙ্ক যথাক্রমে ১৯.১০, ৯.৯১ ও ৮০.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মূলধন ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ৯১ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তবে এক বছর পর ২২ দশমিক ৮২  শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ১২ হাজার ৭০৩ কোটি ২০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্পে চলতি মূলধন ঋণ বিতরণের অঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ২৬.২৫ ও ২২.১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও মাঝারি শিল্পে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৩১ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শিল্পঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শিল্পে যথাক্রমে ২৫.২৮ ও ৩৩.০৪ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মাঝারি শিল্পে ৩.০৪ শতাংশ কমেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার শেয়ার বিজকে বলেন, ঋণ বাড়া খারাপ নয়। ঋণ বাড়লে দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে। জানগণের আয়ের উৎস সৃষ্টি হয়। তবে ঋণ কতটা আদায় হচ্ছে, এটাই প্রধান বিষয়। ঋণ আদায় না হলে এ খাতের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক যুগ ধরে এ খাতে যাচাই-বাছাই ছাড়া অনেক ঋণ দেয়া হয়েছে। যা এখনও আদায় সম্ভব হয়নি। এর ফলে এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই যাচাই-বাছাই করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে যথাযথ খাতে ঋণ বিতরণের কোনো বিকল্প নেই বলে মত এই জেষ্ঠ্য ব্যাংকারের।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০