শিশুকে পশু কামড়ালে করণীয়

শিশুরাই বেশি কুকুর-বিড়ালের কামড়ের শিকার হয়। সব পশুর কামড়-আঁচড়ে জলাতঙ্ক হয় না। তবু কখন কোন অবস্থায় প্রতিষেধক নিতে হবে, সে সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একবার জলাতঙ্ক হয়ে গেলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি প্রায় শতভাগ। ৯০ শতাংশের বেশি জলাতঙ্ক হয়ে থাকে কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে।

রোগের লক্ষণ: সাধারণভাবে র‌্যাবিস ভাইরাস শরীরে প্রবেশের এক থেকে তিন মাসের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়। তবে ক্ষত যদি মুখমণ্ডল ও মাথায় হয়, কিংবা বড় আকারের হয়, তবে পাঁচ দিনের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ পায়।

জলাতঙ্কের লক্ষণ মূলত দুই ধরনের

এক. ভয়ংকর এনকেফালাইটিস ধরন: প্রথম দিকে জ্বর, গলাব্যথা, শিরঃপীড়া ও বমি থাকে। কামড় বা আঁচড়ের স্থান চুলকায়। পরবর্তী সময়ে শিশুর আচরণে দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। দেখা দেয় কষ্টকর পানি খাওয়া ও শ্বাস-প্রশ্বাস (হাইড্রোফোবিয়া-এরোফোবিয়া)। হাসপাতালে ভর্তির দু-এক দিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়।

দুই. প্যারালাইটিক বা ডাম্ব র‌্যাবিস: এ ধরনের র‌্যাবিসের প্রথমে জ্বর ও পরে আক্রান্ত হাত বা পায়ের অবশভাব নিয়ে উপসর্গের শুরু হয়।

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা: পশু কামড় বা আঁচড় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থান সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধরে ধুতে হবে। পরে ৭০ শতাংশ ইথানল, আয়োডিন, পভিডিন-আয়োডিন বা অন্যান্য অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়া ভালো। এরপর দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে।

কুকুর বাড়ি বা পাড়ার পোষা কিংবা পরিচিত হলে এবং স্বাভাবিক আচরণের হয়ে থাকলেও সেই কুকুরটিকে বেঁধে রেখে ১০ দিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ১০ দিন পর প্রাণীটি সুস্থ থাকলে সাধারণভাবে ভয়ের কারণ থাকে না। কেননা জলাতঙ্কগ্রস্ত কুকুর বা পশু পাগলের মতো আচরণ করে।

কুকুর যদি জলাতঙ্কগ্রস্ত মনে হয় বা অপরিচিত হয়, অথবা ১০ দিন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না হয়, তবে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ও পরামর্শে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যান্টি-র‌্যাবিস টিকা নিতে হবে।

জলাতঙ্ক প্রতিষেধক হিসেবে বর্তমানে বেশ কয়েকটা উন্নত মানের টিকা আছে। এগুলো নিয়ম মেনে দিতে হবে। কামড় বা আঁচড়ের ধরনের ওপর নির্ভর করে দিতে হবে র‌্যাবিস ইমিউনিগ্লোবুলিন, ধনুষ্টংকারের প্রতিষেধক টিকা। পোষা পশু-প্রাণীকে র‌্যাবিস টিকার আওতায় নিয়ে আসা উচিত। র‌্যাবিসের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ল্যাবরেটর এবং পশু আলয়ের কর্মীদের র‌্যাবিস প্রতিষেধক টিকা নেয়া উচিত।

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০