শিশুদের অ্যাডিনয়েড

অ্যাডিনয়েড এক ধরনের গ্রন্থি। এই গ্রন্থির সমস্যা ১০ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে নির্ণয় করা হয়। শিশুদের নাকের পেছনে একটু ওপরের দিকে এর অবস্থান। সাধারণত অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি থেকে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে অ্যাডিনয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধি হতে থাকে। অবশ্য সাত থেকে আট বছরের পর থেকে এটা নিজে নিজেই ছোট হতে থাকে, বয়ঃসন্ধির পরে মিলিয়ে যায়।
ঘন ঘন ঠাণ্ডা লেগে আপার রেসপিরেটরি সিস্টেমে ইনফেকশন হলে অ্যাডিনয়েড গ্রন্থিতে সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় গ্রন্থিটি বড় হয়ে যায়। নাক দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে বাধা সৃষ্টি করে। টনসিলও অনেকটা বড় হয়ে যায়। সঠিক সময়ে অ্যাডিনয়েডের চিকিৎসা না করালে শিশুদের কথা বলার সমস্যা, কানে কম শোনা, শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা প্রভৃতি হতে পারে। এমনকি টানা মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হয় বলে দাঁতের গঠন খারাপ হয়ে মুখের বিকৃতিও দেখা দেয়। হতে পারে ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো কঠিন অসুখও। অ্যাডিনয়েড গ্রন্থি যখন স্বাভাবিক থাকে, তখন নানারকম ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করে।

যত অসুবিধা
যেহেতু অ্যাডিনয়েড নাকের পেছনের দিকে থাকে, সুতরাং অ্যাডিনয়েড বেড়ে গেলে নাকেই সব ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ফলে শিশুদের প্রায়ই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। দেখা যায়, রাতে ঘুমের মধ্যে শিশুরা উঠে বসে। শুধু রাতেই নয়, দিনেও শিশুদের হাঁ করে নিঃশ্বাস নিতে হয়। ঘুম না হলে তাদের মন ভালো থাকে না, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় তারা খেলাধুলোর সময়ে একটুখানি দৌড়ঝাঁপ করলে হাঁপিয়ে যায়। মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার ফলে বারবার মুখ শুকিয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে যায়, গলা শুকিয়ে যায় এবং খুসখুসে কাশি হয়।
অ্যাডিনয়েডে সমস্যা দেখা দিলে কানেও ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। কানে এক ধরনের তরল জমে। এমনকি পুঁজও জমতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অ্যাডিনয়েডের সমস্যায় মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। খাবার খেতে সমস্যা হয়। খাওয়ার সময় শিশুরা হাঁপিয়ে উঠে এবং খাবার গিলতে অসুবিধা হয়। কেননা অ্যাডিনয়েডের সঙ্গে টনসিলেও অসুবিধা হতে পারে। এছাড়া অ্যাডিনয়েডের সমস্যা থেকে কথা বলার সময় উচ্চারণেও বিঘ্ন ঘটতে পারে।

চিকিৎসা
অ্যাডিনয়েড বড় হচ্ছে কি না বা কত বড় হয়েছে, তা দেখার জন্য বিশেষ এক ধরনের আয়না বা এন্ডোস্কোপ ব্যবহার করতে হবে। ইনফেকশন আছে কি না, তা বোঝার জন্য মাঝেমধ্যে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। অ্যাডিনয়েড প্রথম দিকে যখনই বড় হতে শুরু হয় ঠিক তখনই সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। অ্যাডিনয়েড অতিরিক্তভাবে বড় হতে থাকলে এর সমাধানের একমাত্র উপায় সার্জারি করে এটি বাদ দেওয়া। একে বলা হয় অ্যাডিনয়ডেক্টমি। চিকিৎসকদের মতে, অ্যাডিনয়ডেক্টমি হচ্ছে এক ধরনের প্রচলিত পদ্ধতি। অস্ত্রোপচার করার কারণ হচ্ছে, এখনও অ্যাডিনয়েডের আধুনিক চিকিৎসা কিংবা কোনো থেরাপি তৈরি হয়নি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০