২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০০ গুণ বেড়েছে। যেকোনো তথ্য আদান-প্রদান করা, জ্ঞান অর্জন করা, এমনকি দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের তথ্য সংগ্রহ করা যায় এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে। কভিড পরিস্থিতির কারণে আমরা সবাই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের সব কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। স্কুল-কলেজের ক্লাস ও পড়াশোনা বহুলাংশে ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে গেছে। শিশুরাও এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে ক্লাস ও পড়াশোনা করছে। ইন্টারনেটের যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। তাই শিশুদের নিরাপদে ইন্টারনেটের সুবিধা দেয়া আমাদের কর্তব্য।
আজকাল ইন্টারনেটে অনেক ধরনের গেম পাওয়া যায়, ফলে শিশুরা এসবের দিকে ঝুঁকছে। এমনকি ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছে। এতে তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ আসছে না। ইউনিসেফের জরিপে বলা হয়েছে, ছেলেশিশুদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রচলন বেশি, যা ৬৩ শতাংশ। এমনকি এই জরিপে আরও একটি বার্তা দেয়া হয়েছে, তা হলো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩২ শতাংশ শিশু চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি।
অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতারও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। সবসময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ জ্বলে, মাথাব্যথা করে এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। বর্তমানে আমরা প্রায়ই লক্ষ করে থাকি যে, শিশুদের চোখে চশমার ব্যবহার বেশি। আবার শিশুরা মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে যায়। সবসময় ইন্টারনেটে গেম খেলা, ভিডিও দেখা ও সোশ্যাল মিডিয়া চালানোয় তারা এতটা নির্ভর হয়ে পড়ে যে মাঠে খেলতে যায় না। তাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। আপনজনের সঙ্গে সময় কম কাটায়। সবসময় ঘরে বন্দি জীবনযাপন করে, ফলে তাদের মেজাজ রুক্ষ হয়ে যায়।
বর্তমানে শিশুরা সাইবার ক্রাইমেরও শিকার হয়। অনলাইনে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে, ছবি আদান-প্রদান করে অনেক সময় তারা ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হয়। শিশুরা ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় এমন ভুল করে। এমনকি অনেক সময় খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশায় নেশাদ্রব্য ও অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং সাইবার বুলিয়িংয়ের শিকার হয়। এতে অনেক শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ে।
ইন্টারনেটের মাত্রাতিরক্ত ব্যবহারে শিশু-কিশোররা অসামাজিক হয়ে পড়ছে। তারা সমাজের সঙ্গে মিশতে চায় না। ইন্টারনেটের অপসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে শিশুদের খাদ্যাভাস, পড়ালেখা ও স্বাভাবিক জীবনাচরণে পরিবর্তন আসে। তারা সময়মতো আহার করে না, কায়িক শ্রম কিংবা খেলাধুলা করে না। রাত জেগে ইন্টারনেটে পড়ে থাকায় পরদিনের সব কাজে ব্যাঘাত ঘটে। সারাদিন ক্লান্ত অনুভব করে। স্মৃতিশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হবে। শিশুরা যেন অতিরিক্ত সময় ইন্টারনেটে ব্যয় না করে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বাবা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে, শিশুরা কীভাবে ইন্টারনেট চালাচ্ছে। শিশুদের গুণগত সময় দিতে হবে।
জেবা ফারিহা
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়