শিশুদের প্রাণঘাতী রোগ সিস্টিক ফাইব্রোসিস


সিস্টিক ফাইব্রোসিস একটি প্রাণঘাতী জন্মগত রোগ। জিনগত ত্রুটির কারণে ফুসফুস ছাড়াও অগ্ন্যাশয়, যকৃৎ, পরিপাকতন্ত্র ও প্রজননতন্ত্রের কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এতে। ইউরোপীয় ও আমেরিকানদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। কিন্তু কয়েক দশক থেকে এশীয়দের মধ্যেও এটি উল্লেখযোগ্য হারে শনাক্ত হচ্ছে।
কারণ: সিস্টিক ফাইব্রোসিস ‘সিস্টিক ফাইব্রোমিন ট্রান্সমেমব্রেন কন্ডাকটেন্স রেগুলেটর’ নামের জিনের ত্রুটির কারণে ঘটে। এতে ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গের এপিথেলিয়াম কোষের (উপরিভাগের স্তর) ক্লোরাইড চ্যানেলের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়, যা কোষের ভেতর ও বাইরে লবণের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। শ্লেষ্মায় একবার জীবাণুর সংক্রমণ হলে সহজে নিরাময় হয় না, ঘনঘন ব্রঙ্কিওলাইটিস/নিউমোনিয়া হয় এবং ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেসব শিশু উত্তরাধিকার সূত্রে একটি পরিবর্তিত সিএফটিআর জিনের দুটি কপি পেয়ে থাকে, তাদের সিস্টিক ফাইব্রোসিস

লক্ষণ: সাধারণত জন্মের পর প্রথম দুই বছরের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। জন্মের পর প্রথম কালো মল, মলত্যাগে দেরি হওয়া, মল জমে পেট ফুলে যাওয়া ও দীর্ঘমেয়াদি জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়া এ রোগের লক্ষণ। শিশু বারবার শ্বাসনালিতে ভাইরাসজনিত প্রদাহ, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুসফুসের প্রদাহ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। শিশুর ওজন বাড়ে না, বারবার সাইনাসের প্রদাহ হয়। পরে ব্রঙ্কিয়াক্টেসিস হয়ে ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দেয়।

শনাক্তকরণ: ঘাম পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করা হয়। ঘামে ক্লোরাইডের মাত্রা নির্ণয় করা হয়, যার পরিমাণ ৬০ এমএমওএল/এল হলে শিশুটি সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া হয়। জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে জিনের ত্রুটি শনাক্ত করে রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
চিকিৎসা: এ রোগে সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার মতো কোনো চিকিৎসা এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ, উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা, নিয়মিত চেস্ট ফিজিওথেরাপি, ব্রঙ্কোডাইলেটর, স্টেরয়েড ইনহেলার, প্যানক্রিয়াটিক এনজাইম, ভিটামিন ও মিনারেল প্রতিস্থাপন এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়মিত সেবনের মাধ্যমে শিশুটি দীর্ঘদিন সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। এ রোগে সারাজীবন শিশুকে ওষুধ সেবন ও ফলোআপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

কখন সিস্টিক ফাইব্রোসিস সন্দেহ করতে হবে: মা-বাবার মধ্যে রক্তের সম্পর্ক, একই রকম উপসর্গ নিয়ে শিশুর ভাইবোনের মৃত্যু, ওজন বৃদ্ধি না পাওয়া, পাতলা ও তৈলাক্ত পায়খানা হওয়া, ঘনঘন ফুসফুসের সংক্রমণ এবং বারবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হলে শিশুকে অবশ্যই শিশু বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।


 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০