বেঁকে যাচ্ছে মেরুদণ্ড। ফলে বেঁকে যাচ্ছে শরীর। তাও আবার অল্প বয়সে। নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বাড়ছে স্কোলিওসিস নামের মেরদণ্ডের অসুখ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৮০ শতাংশ কারণই অজানা। তবে জানা কারণগুলোর মধ্যে জন্মগত কারণের পাশাপাশি স্কুলের ভারী ব্যাগকে দুষছেন অনেকে।
ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেরুদণ্ডের নানা সমস্যায় ভোগা রোগীদের ১২ শতাংশ স্কোলিওসিসে আক্রান্ত, যাদের বেশিরভাগের বয়স ছয় থেকে ২১।
পাঠক আগেই জেনেছেন, স্কোলিওসিসের প্রায় ৮০ শতাংশ কারণ অজানা। একে বলে ইডিওপ্যাথিক স্কোলিওসিস। একেবারে ছোট শিশুদের (শূন্য থেকে তিন) এই সমস্যা হলে বলা হয় ‘ইনফ্যানটাইল স্কোলিওসিস’। চার থেকে ১০ বছরের মধ্যে হলে বলা হয় ‘জুভেনাইল স্কোলিওসিস’। ১১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে হলে বলা যায় ‘অ্যাডলোসেন্ট ইডিওপ্যাথিক স্কোলিওসিস’। বয়স্কদের বেলায় একে বলা হয় ‘ডিজেনারেটিভ স্কোলিওসিস’।
স্কোলিওসিসের জানা কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউরোমাস্কুলার ব্যাধি। যেমন সেরিব্রাল পলসি বা মাস্কুলার ডিস্ট্রোফি। আরও রয়েছে, দুর্ঘটনায় অর্থোপেডিক আঘাত ও সংক্রমণ। তাছাড়া দু’পায়ের দৈর্ঘ্য ছোট-বড় হওয়া রয়েছে। দেহের অবস্থানগত ভুল বিন্যাসের অভ্যাসও হতে পারে। যেমন একদিকে হেলে বসার বদভ্যাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির সময় থেকে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। ছেলেমেয়ে উভয়ের হলেও মেয়েদের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের ১০০ ছেলের মধ্যে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ ও মেয়ের মধ্যে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, খালি চোখে পরিবারের সদস্যদের কাছে এই সমস্যা বোঝার উপায় হলো, এক কাঁধ আরেকটির থেকে উঁচু হওয়া, অঙ্গ একদিকে হেলে যাওয়া, কোমরের হাড়ের স্তরের বৈষম্য, মেরুদণ্ড ও পিঠে ব্যথা, শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট প্রভৃতি। আমাদের মেরুদণ্ডে বিভিন্ন অংশ আছে। যেমন সার্ভাইক্যাল, থোরাসিক, লাম্বার, সেক্রাল ও কক্সিজিয়াল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই মেরুদণ্ডের থোরাসিকে বা লাম্বারে এই বক্রতা দেখা যায়।
যত দিন যাচ্ছে আধুনিক চিকিৎসার উন্নতির ফলে রোগ বেশি ধরা পড়ছে। তাই সংখ্যাও বাড়ছে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে সমীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, ভারী ব্যাগ এর একটা কারণ। ভারী ব্যাগ সরসারি না হলেও পরোক্ষভাবে শিশুদের স্কোলিওসিস বাড়ায়। যেসব বাচ্চার এই সমস্যা আছে, তা দ্রুত বাড়তে থাকে ভারী ব্যাগ ব্যবহারের কারণে।
সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না হলে হার্টের অসুখ, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।