কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও অনেক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। শিশুরা বলতে পারে না বিধায় একপর্যায়ে সমস্যাটা এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে শিশুর আর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যখন-তখন পায়খানা হয়ে যায়। দেখা গেছে শুধু শারীরিক সমস্যা থেকে নয়, নানা মানসিক আঘাত থেকেও এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এর পেছনে বাবা-মায়ের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে কীভাবে মানুষ করা হচ্ছে, অতিরিক্ত শাসন করা হচ্ছে কি না বা বিনা কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে কি নাÑএর ওপরেও সমস্যার গভীরতা নির্ভর করে।
কারণ
কম আঁশ ও অতিরিক্ত চর্বিসমৃদ্ধ খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
অতিরিক্ত মাত্রায় সর্দি-কাশি ও কোলিক বন্ধ করার ওষুধসহ আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
মা বা নানির যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই তা বাচ্চার মধ্যে বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসতে পারে। বিশেষ কিছু গোষ্ঠী বা সমষ্টির মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেশি দেখা যায়
শিশুর যদি হাইপোথাইরয়েডিজম থাকে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুর জšে§র পর যদি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে জেনে নেয়া যায় যে শিশুর থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা আছে কি না, তাহলে শুরুতেই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা সহজ হয়ে যায়
যেসব শিশুদের ডাউন সিনড্রোম (এক ধরনের ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার) আছে তাদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেশি দেখা যায়। ডাউন সিনড্রোম থাকলে পেশির শক্তি কমে যায়, শিশুর স্বাভাবিক হাঁটাচলায় প্রভাব পড়ে। ফলে কোলন ভালোভাবে কাজ করে না। মল ঠিকমতো বের হতে পারে না
হার্সপ্রাঙ্গ ডিজিজ থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এই রোগ যদি ধরা না পড়ে তাহলে মেগা কোলনের মতো জটিল সমস্যা তৈরি হতে পারে। সাধারণ কোষ্ঠকাঠিন্য ও হার্সপ্রাঙ্গ ডিজিজের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য আছে। ফলে অনেক সময় রোগ নির্ণয় করা মুশকিল হয়ে যায়। হার্সপ্রাঙ্গ ডিজিজ নয় বোঝার একটি বিশেষ উপায় হলো জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চার প্রথম মল হয়েছে কি না, সেটা খেয়াল রাখা। নবজাতকের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে এই তথ্য থাকা জরুরি
শিশুর যদি কোনো শারীরিক সমস্যা (সেরিব্রাল পালসি, স্পাইনা বিফিডা, হাইপোটোনিয়া) থাকে তা হলেও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়। এছাড়া ইনটেস্টাইন সংক্রান্ত সমস্যা, ম্যালরোটেশন প্রভৃতি থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
লক্ষণ
মল শক্ত হয়ে যায়
মলের সঙ্গে রক্ত পড়তে পারে। নিয়মিত পেট পরিষ্কার হয় না
মলত্যাগ করতে কষ্ট হয়, ব্যথা করে
অনেক সময় পানির মতো পাতলা মল হতে পারে
পেট পরিষ্কার হতে অনেকক্ষণ সময় লাগে
দুষ্টুমি বেড়ে যায়, মনঃসংযোগ কমে যায়
খেতে অনীহা হয়। বমি হতে পারে
খাওয়ার পরপরই বাথরুমে যেতে হয়
বারবার বাথরুম পায়
সয়লিং (হঠাৎ করে জামাকাপড় নোংরা করে ফেলা) করে
জটিলতা
শারীরিক কষ্ট থাকলে শিশুরা অনেক সময় মানসিক অবসাদে ভোগে। ফলে তারা নিজেদের সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চায়। বন্ধুদের সঙ্গে সহজভাবে মিশতে পারে না। অন্যদের তুলনায় নিজেকে কমজোরি মনে করে, হীনম্মন্যতায় ভোগে, ক্রমেই একলা হয়ে যায়। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে দেখা দেয় আরও জটিলতা। যেমন পাইলস, মেগা কোলন, ফিমলা, ইনটেস্টিনাল অবস্ট্রাকশন, অবস্টিপেশন, পড়াশোনায় অনীহা, মন না বসা প্রভৃতি।
চিকিৎসা
আঁশসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে
মল সফনার বা ল্যাক্সেটিভ অনেক সময় ব্যবহার করা হয়
শিশুকে নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগ করার জন্য মোটিভেট করুন। তবে জোর করবেন না
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশু ব্যায়াম করতে পারে
সতর্কতা
শিশুর খাবার অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। খোসাসহ ফল, যেমনÑআঙুর, পেয়ারা, নাশপাতি প্রভৃতি খাওয়াতে হবে। এছাড়া যেসব ফলে জলীয় অংশ বেশি থাকে, যেমন তরমুজ, শসা প্রভৃতি খাওয়াতে হবে। পালংশাক, গাজর, আটার রুটি, সালাদ প্রভৃতি খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।
ডা. জাকির হোসেন