শিশুর জন্ডিস তথা লিভারে সংক্রমণের জন্য দায়ী ভাইরাসগুলোর মধ্যে ‘এ’ এবং ‘ই’ ভাইরাস দুটি দূষিত খাবার বা দূষিত পানির মাধ্যমে শিশুর শরীরে ঢোকে। অন্যদিকে হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাস-আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহƒত ইনজেকশন সিরিঞ্জ বা রক্ত পরিসঞ্চালনার মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’ ভাইরাস একটা পর্যায়ে আক্রান্ত শিশুর শরীর থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যায় এবং লিভারের দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমস্যা তৈরি করে না। কিন্তু ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাস একবার শরীরে প্রবেশ করলে আর বের হয় না। তারা আক্রান্ত রোগীর লিভারে স্থায়ীভাবে অবস্থান করে ব্যাপক ক্ষতি করে। গর্ভবতী নারী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার গর্ভের সন্তানও আক্রান্ত হতে পারে।
লক্ষণ: আক্রান্ত শিশুর চোখ ও জিহ্বা হলুদ হয়ে যায়। পাশাপাশি তীব্র ক্ষুধামান্দ্য, বমি, ক্লান্তি, হলুদ প্রস্রাব, ওপরের পেটে ব্যথা প্রভৃতি থাকে। অনেক সময় সারা শরীর চুলকায়। জন্ডিস বেশি হলে পায়খানার রং ফ্যাকাশে হতে পারে। লিভারের সংক্রমণ তীব্র হলে আক্রান্ত বাচ্চার পেটে পানিও আসতে পারে। লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেক সময় বমির সঙ্গে রক্তও আসতে পারে, এমনকি অনেক সময় শিশু জ্ঞানও হারায়।
করণীয়: পূর্ণ বিশ্রাম, তবে ঘরের ভেতর খেলাধুলায় সমস্যা নেই। গোসল, খাবার সবই আগের মতো হবে। খাবার নিয়ে জোর করা যাবে না। পানি খাবে, তবে ফলের রস ও দুধ বেশি ভালো। মাছ, মুরগির মাংস ও কুসুম ছাড়া ডিম খেতে পারলে নিষেধ নেই। শাকসবজি খাওয়া ভালো, কারণ রোগীর পায়খানা নিয়মিত হওয়া দরকার। তবে তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার বা দোকান থেকে আনা ফাস্ট ফুড না খাওয়াই ভালো। শিশুর জন্ডিসের বিষয়টি চিকিৎসকের নজরে এনে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়ানো যায়।
প্রতিরোধ: শিশুকে ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) অনুমোদিত সব টিকা নির্দিষ্ট সময়ে দিতে হবে। এসব টিকার মধ্যে হেপাটাইটিস বি’র টিকা আছে, যা দেড় মাস বয়স থেকে দেয়া হয়। বেসরকারি পর্যায়ে হেপাটাইটিসের টিকা কিনতে পাওয়া যায়, সেটি দিয়ে রাখা ভালো। সব গর্ভবতী নারীর অবশ্যই হেপাটাইটিস বি, সি স্ক্রিনিং করতে হবে। নবজাতককে জন্মের পরপরই হেপাটাইটিস বি টিকা (জিরো ডোজ) দিতে হবে, মায়ের বি স্ক্রিনিং নেগেটিভ হলেও। মায়ের বি স্ক্রিনিং যদি পজিটিভ হয়, সে ক্ষেত্রে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নবজাতককে হেপাটাইটিস বি’র পাশাপাশি এক ডোজ হেপাটাইটিস বি ইমিউনোগ্লোবুলিন দিতে হবে।
অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ