সুস্থ শিশুর জন্ম সবার কাম্য। কিন্তু সব শিশু পরিপূর্ণ সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসে না। কোনো কোনো শিশু সঙ্গে করে নিয়ে আসে হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র এবং রক্তনালি বা রক্তনালির ভাল্ভ সরু থাকার মতো সমস্যা। নানা কারণেই শিশুর জন্মগত হƒদ্রোগ হতে পারে। মায়ের গর্ভে থাকার সময় শিশুর হƒদ্যন্ত্রের পরিপূর্ণ গঠন ও বিকাশ না হলে অথবা কোনো ত্রুটি নিয়ে জন্মালে শিশুর এসব হƒদ্রোগ দেখা দেয়। সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় অথবা গর্ভ-পরিকল্পনার সময় যদি মা রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাহলে শিশুর হƒদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অন্তঃসত্ত্বা নারী নানা রকম ওষুধ খেলেও এমন হতে পারে। শিশুর হৃৎপিণ্ডের গঠনগত ত্রুটি বা বংশগত কারণেও শিশুর হৃদ্রোগ হতে পারে।
উপসর্গ: জন্মের পরপরই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়া। ঠোঁট, জিহ্বা ও হাত-পায়ের আঙুল নীলাভ হয়ে আসা। জন্মের পর থেকেই বারবার ঠাণ্ডা-কাশি লাগা। মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে অসুবিধা হওয়া। দুধ খাওয়ার সময় মুখ ও শরীর ঘেমে যাওয়া। শিশুর বুকে ব্যথা। শিশুর হৃৎস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিক হওয়া।
চিকিৎসা: শিশুর হƒদ্রোগ দুই ধরনের হতে পারে। কোনো শিশু হƒদ্রোগ নিয়েই জন্মায়, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে জন্মের পর হৃদ্রোগ দেখা দেয়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করলে বেশিরভাগ হৃদ্রোগ ভালো হয়।
শিশুর হৃদ্রোগের চিকিৎসা দুভাবে করা হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ও বিনা অস্ত্রোপচারে। হƒদ্রোগ নির্ণয়ের পর ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করা হয়। অবস্থা বুঝে পরে ধাপে ধাপে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।
প্রতিরোধ: গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস খুব সাবধানে পার করতে হবে। এ সময়টা গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। এ সময় সন্তান ধারণ করলে সন্তানের নানা ত্রুটি হতে পারে বা হƒদ্রোগ নিয়ে জন্মাতে পারে। এ ছাড়া মায়ের জš§গত হƒদ্রোগ থাকলে শিশু হƒদ্রোগ নিয়ে জন্মাতে পারে। এ সময় কোলাহলপূর্ণ জায়গা ও সামাজিক মেলামেশা যত সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। গর্ভকালীন যেকোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তা থেকে দূরে থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে এক্স-রে করতে হলে গর্ভের শিশুকে এক্স-রে রশ্মি থেকে বাঁচাতে লেড অ্যাপ্রোন পরা যেতে পারে। ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। গর্ভবতী হওয়ার তিন মাস আগে এমএমআর টিকা নেয়া ও গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ডা. তাহমিনা করিম
পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল