Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:45 am

শিশুর জীবন বাঁচায় টিকা

 

টিকা নিয়ে আমাদের ইতিবাচক ধারণা রয়েছে। আমরা জানি, টিকা শিশুর অধিকার। শুধু রোগ প্রতিরোধই নয়, টিকা নেওয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকে শিশু। তাই বলা যায়, শিশুর পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে টিকা।

স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশের মানুষ টিকার প্রয়োজনীয়তা বোঝে। আমাদের দেশের মানুষ রোগ প্রতিরোধ করতে আগ্রহী। টিকাদানের বেলায় বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল বলা যেতে পারে। কারণ এ ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি। এত কিছুর পরও বিশ্ব টিকা সপ্তাহের মূল উদ্দেশ্য বুঝতে আমরা কি প্রস্তুত?

কেননা, সবাই টিকা নিচ্ছে কিনা, তা আমাদের জানতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে। যেমন খাদ্য ও ওষুধে ভেজাল নির্মূল করতে হবে। টিকা সংরক্ষণের পদ্ধতি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

তাই জনসাধারণকে টিকা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে, টিকার চাহিদা সৃষ্টি ও টিকাদানের কভারেজ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ পালন হয়। গত ২৪ এপ্রিল শুরু হয়েছে এ টিকাদান সপ্তাহ। চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এবারের প্রতিপাদ্য ‘টিকা শিশুর জীবন বাঁচায়’।

অল্প কথায় টিকাদানের বিশ্বপরিস্থিতি দেখে নেওয়া যেতে পারে। টিকাদানের ফলে প্রতিবছর দুই থেকে তিন মিলিয়ন মৃত্যু প্রতিরোধ করা যাচ্ছে। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব এক বছর বয়সী ১১৬ মিলিয়ন শিশুকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। এদের সবাইকে ডিপথেরিয়া, টিটেনাস ও হুপিংকাশির (ডিপিটি৩) টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে অ্যাঙ্গোলা, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো, ইথিওপিয়া, ভারত, ইরাক, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও ইউক্রেনের অনেক শিশু এ টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সচেতনতা বাড়ার কারণে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ‘মেনিনজাইটিস এ’ রোগটি অনেকাংশে দূর হয়েছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে হামের প্রাদুর্ভাব কমেছে। হামের কারণে মৃত্যুহার প্রায় ৭৯ শতাংশ কমে গেছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাকে হামমুক্ত ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দীর্ঘ ২২ বছরের প্রচেষ্টার ফলে এমএমআর বা মিজেলস, মাম্পস ও রুবেলা দূর করতে সক্ষম হয়েছে এ দুই মহাদেশ। বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী, বিশ্বের অন্য মহাদেশগুলোও অদূর ভবিষ্যতে এমন ঘোষণা দিতে পারবে। আরও আশার কথা, বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে পোলিও। তবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নাইজেরিয়ার কিছু অংশে এর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে মা ও নবজাতকের ধনুস্টংকার বিলুপ্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে টিকা নিয়ে গবেষণার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে। এর উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী নানা গবেষণা চলছে।

টিকাদান কর্মসূচিতে আমাদের সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। তাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবাদানকারী সংস্থা, পেশাজীবী ও বেসরকারি সংস্থার সবাইকে টিকাদানের গুরুত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। ২০১৫ সালের জরিপের ফল অনুযায়ী, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় এক বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে প্রথম টিকা নেওয়ার হার প্রায় শতভাগ। ১৯৮৫ সালে এ হার ছিল মাত্র দুই শতাংশ। প্রসঙ্গত, ছয়টি টিকা নিয়ে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ইপিআই কার্যক্রম শুরু হয়।

২০০৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০৮ সালে মা ও নবজাতকের ধনুস্টংকার দূর করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আমাদের দেশ। এ ধারাবাহিকতায় এ বছরও আরও কয়েকটি রোগ নির্মূল হয়ে যাক দেশ থেকে।