বমি হলে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে বাবা-মা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এমনকি শিশু নিজেও খুব ভয় পায়। তার হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায়। শিশুর সেবা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
জন্মেরপর থেকে একটি শিশু বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। জন্মের পর সব শিশুর কমবেশি বমি হয়ে থাকে। খাওয়াতে চাইলে ঠোঁট উল্টে ‘ওয়াক’ করে শিশুরা। এ রকম বমির ভাব শিশুদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক কিছু ইঙ্গিত করে না, তবে অতিরিক্ত বমি শিশুকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। এটা কেবল অনিচ্ছা নয়, কোনো অসুখের লক্ষণ কিংবা উপসর্গও হতে পারে। তখন শিশুর বমি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
কারণ
পাকস্থলীর ভাইরাসের কারণে কিংবা পাকস্থলীর অনুপযোগী খাবার খেলে শিশুদের সচরাচর বমি হয়
শিশুকে জোর করে খাওয়ানো হলে অনেক সময় বমি করে। আবার একই ধরনের খাবার বারবার খাওয়ালে শিশু অরুচি বোধ করে, বমি করে। হঠাৎ করে খাবারে পরিবর্তন আনলে এবং শক্ত ও ঘন খাবারে বমি হতে পারে। অনেক সময় ক্রিমির সংক্রমণে শিশুর বমি হয়ে থাকে
জন্মের পর প্রথম সপ্তাহে বুকের দুধ খাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ তার অভ্যস্ত হয়ে ওঠার একটি ব্যাপার থাকে। এ জন্য বুকের দুধ খাওয়ার সময় বমি হতে পারে
মস্তিষ্কের কোনো আঘাত, শ্বাসকষ্ট, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও মস্তিষ্কের ঝিল্লির প্রদাহ থাকলে
বেশিরভাগ শিশুরই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খেতে ইচ্ছে করে না, বমি ভাব হয়। কোনো খাবার অপছন্দের হলে এমন হতে পারে। শিশুদের বদহজম বা পেটে গ্যাসও হতে পারে। চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড বা চকোলেট বেশি খেয়ে ফেললে পেটে গ্যাস হয়ে বমি ভাব হতে পারে। যেকোনো ওষুধ খাওয়ার সময় শিশুরা ‘ওয়াক’ করতে পারে
অনেক ক্ষেত্রে বমির নেপথ্যে কোনো গুরুতর কারণও থাকতে পারে। রক্তশূন্যতা, যকৃতের প্রদাহ, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব, খিঁচুনি নিরোধক ওষুধ, মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ এমনকি মস্তিষ্কের টিউমার হলেও বমি ভাব হতে পারে
অনেক শিশু খাবারের পর কিংবা ঢেঁকুর তোলার পরে থুতু ফেলে। এটা বমি নয় এবং এর মানে এই নয় যে শিশুর ভাইরাস রয়েছে। যদি ঠিকমতো যত্ন নেওয়া যায়, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বমি আট থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।
যা করবেন
ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে বুকের দুধ খাওয়াবেন। প্যাকেটজাত দুধ বন্ধ রাখুন
ছোট কিংবা বড় শিশুর বমি বন্ধ হওয়া পর্যন্ত দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করুন
স প্রতিবার বমির পরে ঘন ঘন অল্পমাত্রার দুই থেকে চারবার অল্প করে তরল খাবার খাওয়ানো শুরু করুন
আট থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে বড় শিশু বমি না করলে তাকে বিভিন্ন ধরনের শুকনো খাবার খেতে দিন।
যা করবেন না
শিশুকে বেশি পরিমাণ পানীয় দেবেন না। এতে বমি বাড়তে পারে
২৪ ঘণ্টায় শিশুকে দুধ কিংবা দুধজাত পণ্য পনির, দই, আইসক্রিম প্রভৃতি দেবেন না।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
১২ ঘণ্টার মধ্যে বমির কোনো পরিবর্তন না হলে
শিশু দুই ঘণ্টার বেশি পেটব্যথার অভিযোগ করলে
১২ ঘণ্টার মধ্যে শিশুর প্রস্রাব না হলে
শিশুর ঠোঁট, জিহ্বা ও মুখ শুকনো থাকলে
শিশু কোনো তরল না খেতে পারলে
শিশু খুব উত্তেজিত থাকলে কিংবা অতিরিক্ত ঘুমালে।
প্রতিরোধ
যতদূর সম্ভব শিশুকে অসুস্থ লোকজনের কাছ থেকে দূরে রাখবেন
শিশুকে হিমায়িত খাবার খাওয়াবেন না
খাবার আগে ও পরে শিশুকে ভালো করে হাত ধোয়া শেখাবেন
যেসব রোগে বমি হয়, সেগুলো প্রতিরোধের দিকে নজর দিতে হবে
নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করান
শিশুর খাবার যেন অর্ধসিদ্ধ, অপরিচ্ছন্ন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
বাইরের খাবার না দিয়ে বাড়িতে তৈরি খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন
শিশুর ডিহাইড্রেশন কিংবা পানিশূন্যতা যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খাওয়ান
গন্ধযুক্ত পারফিউম, খাবারের গন্ধ, স্যাঁতসেঁতে ও চোখধাঁধানো আলোর সংস্পর্শ থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। এগুলো শিশুর বমির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়
বমিনিরোধক জাতীয় ওষুধ শিশুকে খাওয়াতে পারেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
ইন্টারনেট অবলম্বনে শিপন আহমেদ