Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 5:01 am

শিশুর বিকাশে পারিবারিক শিক্ষা

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুরা আগামীর  জাতি গড়ার শিল্পী। আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গঠনের গুরুদায়িত্ব পরিবার প্রাকৃতিক নিয়মেই পেয়েছে। প্রকৃতির মাঝে সব জীব যেমন লালিত-পালিত হয়, তেমনই শিশুর সামাজিকীকরণ ও চরিত্র গঠনে পরিবারের শিক্ষাই প্রধান। শিশুরা আদব-কায়দা, আমল-আখলাক, নৈতিক শিষ্টাচার, উত্তম আচার-আচরণ, সুন্দর চলাফেরা সবকিছু পরিবার থেকে প্রথম শিক্ষা পেয়ে থাকে।

পরিবার বলতে বিশেষ করে পিতা-মাতার সান্নিধ্যই একটি শিশুকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। জšে§র পর থেকে পিতা-মাতাই শিশুর সার্বিক পর্যবেক্ষণ করেন। শিশুর প্রত্যেক জিনিসের হাতেখড়ি হয় পিতা-মাতার কাছেই। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটি বিশেষ নেয়ামত হচ্ছে  শিশুদের ব্রেইন শার্প এবং ক্যাপচার ক্যাপাবিলিটি। আরও সহজ করে বলতে গেলে শিশুরা তার চারপাশের ঘটিত খুব সূক্ষ্ম বিষয়াবলিও সহজেই ধারণ করতে পারে। এ সময় পিতা-মাতাসহ পরিবারের সবাইকে শিশুর বিষয়ে যত্মবান ও সচেতন হওয়া জরুরি।  কারণ সে যা কিছু দেখছে সবকিছু নিজের ব্রেইনে ধারণ করছে।

বর্তমানে দেশের শহরাঞ্চলে দেখা যায়, অধিকাংশ পিতামাতা চাকরিজীবী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শিশুকে যথাযথ যতœও সময় দিতে সক্ষম হচ্ছে না। এর ফলে দেখা যায়, শিশুকে যার তত্ত্বাবধানে রাখা হয় তাকেই প্রতিটা ক্ষেত্রে অনুসরণ করে। আচার-আচরণ, কথা বলার ধরন, মনমানসিকতা প্রভৃতিসহ একটি শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে যত প্রভাব লক্ষণীয় সবকিছুই তত্ত্বাবধায়কের আদলেই হয়ে ওঠে। এজন্য শুরু থেকেই পিতামাতার উচিত শিশুকে পারিবারিক নিয়ম-শৃঙ্খলা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, ভালোবাসা, সহযোগিতা, সহানুভূতি প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচয় করিয়ে দেয়া। পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থান, সামাজিক শ্রেণি, পারিবারিক কাঠামো, পিতামাতার সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলোও শিশুর আচরণ অনুধ্যানের ক্ষেত্রে সমহারে জড়িত। তাছাড়া ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ তৈরিকরণে শিশুদের সঙ্গে পরিবারের সুসম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য শিশুকে ভালোভাবে সময় দেয়ার ক্ষেত্রে আরও আন্তরিক ভূমিকা পালন করা।

শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে পরিবারের শিক্ষা সম্পর্কে বিগত দশকগুলোয় অনেক লেখালেখি ও গবেষণা  হয়েছে। সব লেখক, গবেষক স্বীকার করেছেন যে পরিবারের শিক্ষা ও সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া শিশুর বিকাশে সুষ্ঠুধারা ও সন্তোষজনক অগ্রগতি সম্ভব নয়। একজন শিশু মানসিক, শারীরিক বিকাশের জন্য উত্তম পরিচর্যার বিকল্প নেই।

সম্প্রতি আরও মারাত্মক বিষয় লক্ষ্মণীয় যে, অনেক মা সন্তান যখন কান্না করে, জেদ ধরে তখন তাদের কান্না থামানোর জন্য মোবাইল ফোনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। স্মার্টফোন তাদের মস্তিষ্ককে সংকুচিত করে। আসক্তি বৃদ্ধি করে। সন্তান যখন রাগ করে, কান্না করে, জেদ করে তখন তাদের ভালোভাবে আদর, সোহাগ, মায়া-মমতা দেয়া উচিত অথবা বিভিন্ন ধরনের খেলনা আছে সেগুলো দেয়া উচিত। সবচেয়ে বেশি তাদের সময় দেয়া উচিত। তারা জানতে চাই, শিখতে চাই, তারা যেভাবে চাই সেভাবে শেখানো উচিত। তাদের সঠিক পথ দেখানো উচিত। কিন্তু এগুলোর পরিবর্তে যখন মোবাইল ফোন হাতে দেয়; সে আস্তে আস্তে মোবাইল আসক্ত হয়ে ওঠে। ইউটিউব, ফেসবুক রিলস, মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে যায়। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে উগ্র আচরণের হয়ে ওঠে। সে এটাকে নিজের গণ্ডি হিসেবে ধরে নেয়। সে সময়মতো মোবাইল ফোন না পেলে অনেক অঘটনও ঘটিয়ে বসে। এজন্য অভিভাবকদের উচিত, শিশুদের স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখা এবং আদর, স্নেহ, মায়া-মমতায় গড়ে তোলা।

প্রতিটি শিশুদের মধ্যে লুকিয়ে আছে নানান রকমের প্রতিভা। তার প্রতিভা বিকশিত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে পরিবার, মা-বাবা এবং শিক্ষকের। তাকে ভালোভাবে পরিচর্যা করে আগামী দিনের কর্ণধার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। সেজন্য পারিবারিক শিক্ষার বিকল্প নেই।

ইমরান উদ্দিন

শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়