সুস্থ একটি শিশুর চোখ-মুখসহ সারা শরীর আচমকা ফুলে গেলে মা-বাবার উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হয় কিডনি থেকে। এর নাম নেফ্রোটিক সিনড্রোম।
কিডনির এ ছাঁকনিতে কোনো কারণে ক্ষতের সৃষ্টি হলে এর ছিদ্রগুলো অস্বাভাবিক বড় হয়ে যায়। এর ফলে যেসব পদার্থ এ ছাঁকনিতে আটকে যেত, সেগুলো প্রস াবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এসব পদার্থের মধ্যে থাকে অ্যালবুমিন নামের এক ধরনের প্রোটিন, যা রক্তনালির ভেতরের পানি ধরে রাখে। এতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। কিডনির ছাঁকনির ছিদ্র বড় হয়ে যাওয়ায় অ্যালবুমিন বেরিয়ে যায়; ফলে রক্তে এর পরিমাণ কমে যায়। এ কারণে রক্তনালির ভেতরের জলীয় অংশ রক্তনালির বাইরে বেরিয়ে আসে এবং নানা জায়গায় জমতে থাকে।
লক্ষণ: মুখ-চোখসহ শরীর ফুলে যাওয়া। ফুলে যাওয়া জায়গাগুলোতে চাপ দিলে দেবে যাবে; তবে ব্যথা থাকবে না। প্রস াবের পরিমাণ কমে যায়, তবে রং স্বাভাবিক থাকে। অনেক সময় ফুসফুসের চারপাশে, পেটে পানি জমে যায়।
জটিলতা: পেটে তীব্র ব্যথাসহ পেট ফুলে শক্ত হয়ে গেলে ও প্রস াব বন্ধ হয়ে গেলে জটিলতা দেখা দেয়। রক্ত ঘন হয়ে জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এতে করে অনেক সময় ফুসফুসে, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বিঘœ হতে পারে।
পরীক্ষা: প্রস্রাবের সাধারণ একটা পরীক্ষা করে এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। তবে রোগের অবস্থা বুঝতে রক্তের আরও দু-একটা পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
করণীয়: আক্রান্ত শিশুকে চিকিৎসকের দেয়া ওষুধ খাওয়াবেন ও নিয়ম মেনে চলবেন। প্রস্রাব জ্বাল দিয়ে আমিষের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা। চিকিৎসক বা নার্সের কাছ থেকে শিখে বাড়িতেই তা করা যায়। আমিষজাতীয় খাবার অর্থাৎ কুসুম ছাড়া ডিম, মাছ, মাংস, ডাল বেশি খেতে দিতে হবে। খাওয়ার পানি মেপে দিতে হতে পারে; সে ক্ষেত্রে প্রস্রাবের পরিমাণ মাপতে হবে। খাবারে আলাদা লবণ দেয়া যাবে না। ছেলেশিশুদের অণ্ডকোষ ফুলে গেলে ছোট বালিশ বা অন্য কিছু দিয়ে একটু উঁচু করে রাখলে ভালো ফল দেবে।
মনে রাখুন: সাধারণত জ্বর, প্রস্রাবে জ্বালা বা ব্যথা থাকে না। আক্রান্ত শিশু আপাতদৃষ্টে স্বাভাবিক থাকে; চলাফেরা, খেলাধুলাÑসবই ঠিক থাকে। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাবেন। যদি শিশুসন্তান ক. ৮-১০ ঘণ্টা একনাগাড়ে প্রস্রাব না করে; খ. পেট ফুলে যায়; গ. জ্বর আসে; শ্বাসকষ্ট হয়।
অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা
বিভাগীয় প্রধান, শিশুরোগ বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল