চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম ‘ব্রেথ হোল্ডিং স্পেলস’। এ সমস্যায় আক্রান্ত শিশু অতিরিক্ত কান্নাকাটির সময় হঠাৎ নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দেয়। অনেকে বলেন, দম আটকে গেছে। এতে করে মা-বাবাসহ অন্যরা খুব ভয় পেয়ে যান। সাধারণভাবে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মধ্যে এ শ্বাস বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
শিশুর এ উপসর্গ দেখা দিলে তা যে ‘হাইপারসায়ানোটিক স্পেলস’ (হার্টের একধরনের ত্রুটি) নয়, সেটি আগে নিশ্চিত হওয়া দরকার।
ব্রেথ হোল্ডিং স্পেলস মূলত ইতিহাস ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। এতে সচরাচর ইইজি বা সিটি-এমআরআই প্রভৃতি নিউরো ইমেজিং করানোর প্রয়োজন পড়ে না।
তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা: শিশু হঠাৎ শ্বাস বন্ধ করে রাখলে তাৎক্ষণিকভাবে সাবধানে তাকে মেঝেতে শুইয়ে রাখতে হবে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত, যাতে সে কোনো আঘাতের শিকার না হয়। এক পাশে কাত করে শোয়াতে হবে। তার শ্বাসনালি উম্মুক্ত আছে কি না, তাও যাচাই করে দেখতে হয়। সিপিআর দেয়ার দরকার নেই। এ সময় শিশুকে ঝাঁকানো অথবা তার গায়ে ও চোখে-মুখে পানি ছিটানো, কিংবা মুখের মধ্যে কিছু ঢোকানোর চেষ্টা করা অনুচিত।
দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা: এ রোগের প্রতিকারমূলক কোনো ওষুধ নেই। তবে শিশুর রক্তাল্পতা নির্ণয় করে তাকে ছয় থেকে আট সপ্তাহের জন্য আয়রন থেরাপির কথা বলা আছে। এতে রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা বাড়ে।
শিশু যখন জোরে কাঁদে, শ্বাসবন্ধ অবস্থায় যাবে মনে হয়, তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ভোলানোর জন্য সামনে নতুন কোনো খেলনা বা পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। যাতে করে তার মনের পরিবর্তন ঘটে।
মা-বাবার প্রতি পরামর্শ: এ রোগে শিশুর কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। শিশুর ব্রেনের ইনজুরি বা আঘাত, মৃগীরোগ, ব্রেনের অক্সিজেনের অভাব, কিংবা বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে শিশু যাতে খুব ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ও ইনজুরির কবলে না পড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
শিশুর বয়স তিন মাসের কম হলে তার অজ্ঞান অবস্থা যদি এক মিনিটের বেশি স্থায়ী থাকে এবং ঘনঘন এ রোগে আক্রান্ত হতে থাকে, বা এ অসুখের আড়ালে মৃগী রোগ কিংবা হাইপার সায়ানোটিক স্পেলস আছে বলে সন্দেহ হয়, তবে অনতিবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল