শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। আজকের কোমলমতি শিশু আগামী দিনে জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। তাই শিশুর বিকাশে তার প্রতি যত্নশীল হওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। সাধারণত ১৮ বছরের নিচের বয়সী ছেলেমেয়েকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। শিশুদের সুরক্ষার দায়িত্ব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে এ শিশুদের বিকাশ সাধন করতে হয়ে। বিভিন্ন উন্নত দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া হয়। অনেক দেশে শিশুশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা আছে। কিন্তু অনুন্নত দেশে শিশুরা তাদের বাবা মায়ের সঙ্গে কাজে অংশগ্রহণ করে অর্থ উপার্জন করে। ফলে তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ পরিপূর্ণভাবে হয় না। আমাদের দেশে এ সমস্যা প্রবল। দারিদ্র্য পরিবারগুলাতে বাবা-মা তাদের শিশুসন্তানকে অর্থের জন্য কাজে লাগিয়ে দেন। যে বয়সে তাদের হাতে কলম, বই, খাতা থাকার কথা, সেখানে তারা ইট ভাঙছে, মাটি কাটছে, কাহিক শ্রম করছে বা বাচ্চা মেয়েরা অন্যের বাসায় কাজ করছে। এগুলো খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই সে দেশের শিশুদের সবরকম সুরক্ষা দিতে হবে। পারিবারিকভাবে যদি বাবা-মা তাদের সন্তানদের ভরণপোষণ না করতে পারে তবে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। এখন অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে হয়তো এটা সম্ভব না, কারণ এত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব বহন করা এসব দেশের পক্ষে সম্ভব না। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে তাদের সন্তাননীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আমাদের দেশে দুই সন্তানের বেশি সন্তান না নেওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হয় এবং এক সন্তান নিতে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে অনেক ক্ষেত্রে শহরের অনেক পরিবারও দুই এর অধিক সন্তান নেয়। গরিব পরিবার যারা আছে তারা বেশিরভাগ দুইয়ের অধিক সন্তান নেয়। তখন তারা এই সন্তানদের ভরণপোষণ করতে না পেরে অল্প বয়সেই তাদের কাজে লাগিয়ে দেয়। হয়তো একটি পরিবারে একজন সন্তানকে শিক্ষিত করে, বাকিদের কায়িক শ্রমে নিয়োজিত করে। আবার যারা তাদের কাজে নেয় তারাও শিশু হিসেবে অল্প টাকা বেতনে বেশি কাজ করিয়ে নেয়। ফলস্বরূপ দেখা যায় অনেক শিশুই অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে। বা সমাজের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। এর ফলে সে দেশের কার্যত কোনো উন্নতি হয় না। এ শিশুরাই তখন বড় হয়ে গার্মেন্টে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে বা বিদেশে শ্রমিক হিসেবে প্রেরিত হয়। এটাই একটা উন্নত দেশের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের পার্থক্য। উন্নত দেশ বিদেশে মেধা রপ্তানি করে আর উন্নয়নশীল দেশ শ্রমিক! তাই সমাজ বা দেশের উন্নতির জন্য শিশুশ্রম বন্ধ করা অবশ্যই জরুরি। শিশুদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বেশি করে কার্যকর করতে হবে। ছিন্নমূল পথশিশু যারা আছে তাদের সঠিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে বা ব্যক্তি উদ্যোগে পুনর্বাসিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের একার পক্ষে এ বৃহৎ কর্মযজ্ঞ আর্থিকভাবে সম্ভব না। তাই সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। এ শিশুদের লেখাপড়া, সঠিক বিকাশের জন্য অর্থ সহায়তা করতে হবে। সে সঙ্গে আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। শিশুদের দিয়ে কাহিক শ্রম করানোর মতো মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে শিশুদের প্রাইমারি পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়াও নতুন বই, ব্যাগ বিনা মূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। আবার তাদের উপবৃত্তিও দেওয়া হচ্ছে। এ সবের মাঝেও অনেক জায়গায় গোপনে বা প্রকাশ্যে শিশুশ্রম চলছে। সরকারের উচিত কঠোরভাবে এটা তদারকি করা। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো থেকে প্রাপ্ত শিশুসহায়তা সঠিক ব্যবহার করতে হবে। শিশুসুরক্ষা আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। প্রাইমারি স্কুলগুলোতে শিশুদের প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে শিশুশ্রম যে কোনো দেশের অভিশাপের নামান্তর। ভিতটাই যদি মজবুত না হয় তবে ভবিষ্যৎ কখনও উজ্জ্বল হয় না। তাই শিক্ষিত, সচেতন ভবিষ্যৎ পেতে চাইলে এখন থেকেই শিশুদের প্রতি যতœশীল হতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। এবং শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাছাড়া শিক্ষাকে আরও কর্মমুখী করতে হবে। কারণ বর্তমানে অনেক বাবা-মা ভাবে যে এত পড়াশোনা করে শিক্ষিত হয়ে বেকার থাকার চেয়ে অল্পবয়সেই কাজ করা শুরু করুক। তাই শিক্ষা যদি কর্মমুখী হয় তবে সেসব বাবা-মা আরও উৎসাহিত হবে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার প্রতি। শিশুশ্রমকে প্রতিরোধের জন্য তাই সবাই মিলে একত্রে কাজ করতে হবে। আগামীর ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত না হয় সেদিকে আমাদের সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তাসনিম হাসান আবির
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়