শিশুশ্রম নিরুৎসাহিত করুন

বাংলাদেশে শিশুশ্রম এর মূল কারণ হচ্ছে দারিদ্র্য। একজন বিশেষজ্ঞ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘শিশু শ্রমিক প্রধানত আমাদের জাতির জন্য একটি অভিশাপ।” দেশের একাংশের অপরিসীম দারিদ্র্যের জন্যই দায়ী। শিশু শ্রমিক প্রথা রদ করার জন্য আরও আইন প্রণয়নের কথা ভাবা হচ্ছে। শিশুদের দুঃখ কষ্টের কথা ভেবে ব্যথাতুর হƒদয়ে কবি সুকান্তকে বলতে হয়ে ছিল সবচেয়ে খেতে ভালো মানুষের রক্ত। মানুষ আজ লোভী পশুদের মতোই মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। মানুষের প্রত্যাশার রাজ্য শিশুদের মুক্তি নেই, শিশুদের কলকারখানায় শ্রমিক বৃদ্ধিতে নিয়োগ করে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মানুষ প্রচুর মুনাফা অর্জন করে চলছে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা তাদের কাজ হাসিল করে থাকে। ক্রিশ্চিয়ান রসেটি এদেরই কথা কল্পনা করে তার করুণ আর্তি ব্যক্ত করেছেন তার লেখা ঈৎু ড়ভ ঃযধ ঈযরষফৎবহ-এ।

আমরা জানি, বাংলাদেশি বিভিন্ন কলকারখানায় এবং গৃহস্থালির কাজে দশ বছরের নিচে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কম নেই। ইদানীং আন্তর্জাতিক চাপে গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সংখ্যা কমিয়ে প্রায় শূন্যের কোটায় আনা হয়েছে। তবে বেশিসংখ্যক শিশু শ্রমিক হোটেল-রেস্তোরাঁয় বয়ের কাজ করতে হয়। তা ছাড়া এদের দিয়ে বড় ধরনের আতশবাজি, দিয়াশলাই কারখানায় কিংবা বন্দর এলাকায় শিশু শ্রমিকদের জোর করে মাফিয়া চক্রান্তে লিপ্ত করা হয়। এছাড়া চুরি-ছিনতাই ভিক্ষা-বৃত্তি প্রভৃতি কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির সমাজবিরোধী লোক প্রচুর অর্থ উপার্জন করে থাকে। এ দেশে প্রচুরসংখ্যক শিশু অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়।

আমাদের দেশে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা শতকরা ৭০ ভাগ। এরা দারিদ্র্যের জ্বালায় নিজেদের সন্তানদের শিশু শ্রমিকের বৃদ্ধি নিতে বাধ্য করে। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পত্তি বণ্টনের প্রতিক্রিয়ার ফলে শিশু শ্রমিকের প্রভৃতি সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে। রাজনৈতিক বিপর্যয় সাম্প্রদায়িকতা-অসাম্প্রদায়িকতা উদ্বাস্তু জীবনের ছিন্নমূল উচ্চারণ প্রভৃতি সমস্যার জন্য অধিকাংশ দায়ী। পরিবারের আয় উপার্জন সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। এক একটি দম্পতি যেখানে অনেকগুলো সন্তান সেখানে পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য সৃষ্টির রোজগার যুক্ত না হলে চলে না, ফলে সমস্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে।

তাছাড়া আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি, শিশুদের শ্রমিক ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাচীনকাল থেকেই চলে এসেছে। বর্তমান সভ্য দেশগুলো মানুষ যেখানে বিবেক শক্তি স্বাধীনতা বড়াই করে সেখানে কেন থাকবে মানবতার অপমান নির্লজ্জতার এই উদাহরণ। সারাদিন ১৪-১৬ ঘণ্টা পরিশ্রম করে ওই শিশু শ্রমিককে উপার্জন করে, যা আয় করে তাতে তার নিজের আহারের অবস্থান হয় না। অদক্ষ শ্রমিক বলে তাদের অনেক নির্দিষ্ট মজুরি নেই। অথচ তাদের ওপরে চলে আত্মনিবেদন সামান্যতম অমনোযোগের অভিযোগে লাথি ব্যথা সহ্য করতে হয়। এসব শিশু শ্রমিকের চোখের জলের হিসাব পৃথিবীর সভ্য সমাজে রাখার সময় কোথায় যেন হাজার হাজার শিশুর কান্না ও তাদের লবণাক্ত চোখের জলে আজকের পৃথিবীকে ভরিয়ে তুলেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশে শিশু ও নারী নির্যাতন আইন-১৯৯৫ সালে বলবৎ থাকলেও এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি। আসলে আইন দিয়ে সমস্যার বাস্তব সমাধান সম্ভব হয়নি। উপযুক্ত শিক্ষার প্রসার এবং দারিদ্র্য বিমোচন ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। শিশু শ্রমিকের পুনর্বাসনের দায়িত্ব যেমন সরকারকে গ্রহণ করতে হবে, তেমনি এ ব্যাপারে সমাজকল্যাণমূলক বেসরকারি সংস্থাগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। বাংলাদেশের শহর অঞ্চলের বিত্তবানদের গৃহে শিশু নির্যাতন হচ্ছে। যেমন আমরা দেখতে পারি, শহরে কাজের মেয়ে হিসেবে যারা কাজ করে তাদের সামান্য অপরাধের জন্য গৃহিণী, গৃহস্বামী অমানবিক শাস্তি দিয়ে থাকে। প্রায় প্রতিদিন এই ধরনের নৃশংস ঘটনা খবরের কাগজে প্রকাশ পাচ্ছে। অন্য মানুষের সন্তান বলে কিছু মনে করে না, এদের হাত থেকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর অবসন একান্ত জরুরি, অন্যথায় বিশ্ব মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়বে।

আন্তর্জাতিক আইনের ১৯৮৯ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও শিশুশ্রম সমস্যা সমাধান সমাধান হযনি। মানবতার নিদারুণ সংকট ঘনিয়ে আসবে সেদিন, যেদিন পৃথিবীর আলোয় শিশুমনের অবস্থান স্থান হবে না। শিশুর মনকে যেখানে নৃশংস বিশ্বাসের দলবদ্ধ হয়ে বন্দি করতে চায়, সেখানে জীবন হয়ে ওঠে মূল্যহীন। পৃথিবীতে বধ্যভূমিতে পরিণত করার এ মনোভাবকে পরিবর্তিত করতে হবেÑকোনো মূল্যের বিনিময়ে। সুতরাং সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং যথাযথ আইন প্রণয়ন করতে হবে।

হাফিজুর রহমান

কাকিনা, লালমনিরহাট

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০