ড. মতিউর রহমান: বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ শিশুর উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর এবং বৈচিত্র্যময় খাদ্যের প্রাপ্তিতে অভাব রয়েছে। শিশু খাদ্য দারিদ্র্য নামে পরিচিত এ সংকটটি ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বিপণন অনুশীলনসহ জটিল কারণগুলোর দ্বারা উদ্ভূত হয়।
ইউনিসেফের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন, ‘ঈযরষফ ঋড়ড়ফ চড়াবৎঃু: ঘঁঃৎরঃরড়হ উবঢ়ৎরাধঃরড়হ রহ ঊধৎষু ঈযরষফযড়ড়ফ’ (শিশুর খাদ্য দারিদ্র্য: প্রাথমিক শৈশবে পুষ্টি বঞ্চনা) এই সমস্যার বিধ্বংসী পরিণতির ওপর আলোকপাত করেছে এবং সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি সেক্টর থেকে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউনিসেফ শিশু খাদ্য দারিদ্র্যকে সংজ্ঞায়িত করেছে শিশুদের প্রাথমিক বছরগুলোয় প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা এবং প্রাপ্তির অক্ষমতা হিসেবে। সুষম খাদ্যের অভাব একটি শিশুর বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি এবং জ্ঞানীয় বিকাশের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
এটি একটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে, সংক্রমণের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং তাদের শেখার এবং তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। শৈশবকালে সঠিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত শিশুরা স্কুলে শেখার জন্য বেশি সংগ্রাম করতে পারে, তাদের ভবিষ্যৎ উপার্জনের সম্ভাবনা কম থাকে এবং দারিদ্র্যের চক্রে আটকে থাকে, যা প্রজšে§র পর প্রজš§ ধরে চলে।
প্রতিবেদনে বিশ্ব পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী চারজন শিশুর মধ্যে একজন, প্রায় ১৮১ মিলিয়ন, শিশু খাদ্যের দারিদ্র্যের সম্মুখীন হচ্ছে। এটি লাখ লাখ শিশুর জন্য প্রযোজ্য তাদের শক্তিশালী শরীর এবং মন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করে। যদিও এই সংকটের অবসানের দিকে অগ্রগতি ধীর, কিছু অঞ্চল এবং দেশ দেখিয়েছে যে পরিবর্তন সম্ভব। তাদের সাফল্যের গল্পগুলো মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি দেয় এবং ভবিষ্যতের জন্য আশা দেখায় যেখানে সক শিশু স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের সুযোগ পাবে।
প্রতিবেদনের মূল ফলাফলগুলো শিশুখাদ্য দারিদ্র্যের জটিলতার ওপর আলোকপাত করে: শিশুখাদ্যের গুরুতর দারিদ্র্য, দরিদ্র এবং অদরিদ্র উভয় পরিবারকেই প্রভাবিত করে, ইঙ্গিত করে যে আয় একমাত্র নির্ধারক নয়। এটি অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে যা কেবল অর্থনৈতিক বৈষম্যের বাইরেও বিস্তৃত কারণগুলোর সমাধান করে।
গুরুতর খাদ্য দারিদ্র্য শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিকাশের জন্য বিরাট ঝুঁকি সৃষ্টি করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায়, তারা ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিনের মতো অপরিহার্য পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়, যা তাদের সুস্থভাবে বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য। গুরুতর খাদ্য দারিদ্র্যের শিকার শিশুরা প্রায়ই সস্তা, অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভর করে যা ক্যালোরিতে সমৃদ্ধ কিন্তু পুষ্টিতে দরিদ্র। এই খাবারগুলো শিশুদের স্থূলতা, হƒদরোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
দুর্বল দেশগুলোতে দ্বন্দ্ব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পুষ্টি সংকট একত্রভাবে শিশুদের মধ্যে খাদ্য দারিদ্র্যকে তীব্রতর করে তুলছে। এ সমস্যাগুলো একে অপরের সাথে জড়িত এবং খাদ্য ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে, তাজা খাবারের প্রাপ্যতা হ্রাস করে এবং খাদ্যের দাম বাড়ায়। এর ফলে পরিবারগুলোর জন্য তাদের সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার কেনা কঠিন হয়ে পড়ে।
গুরুতর শিশুখাদ্য দারিদ্র্য শিশু অপুষ্টির একটি প্রধান চালিকাশক্তি। যেসব দেশে শিশু অপুষ্টির হার বেশি, সেসব দেশে গুরুতর শিশু খাদ্য দারিদ্র্যের হারও তিনগুণ বেশি। এর কারণ হলো যখন পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে বা সংগ্রহ করতে পারে না, তখন শিশুরা অপুষ্টির ঝুঁকিতে পড়ে।
রুদ্ধ বিকাশ বা ব্যাহত বুদ্ধি হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শিশুরা তাদের বয়সের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টির একটি প্রধান লক্ষণ এবং এর ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। অপুষ্টি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে; যার ফলে শেখা এবং মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।
প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী তিনজনের মধ্যে দুজন শিশুখাদ্য দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। এর মানে হলো প্রায় ১০ মিলিয়ন শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না; যার ফলে তাদের স্বাস্থ্য ও বিকাশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এই শিশুরা প্রয়োজনীয় পাঁচটি খাদ্য গোষ্ঠীর মধ্যে কমপক্ষে একটির ঘাটতি অনুভব করে। এর ফলে তাদের ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের অভাব হয়; যা তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন। এই খাদ্য দারিদ্র্যের পরিণতি ভয়াবহ। গুরুতর খাদ্য দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা শিশুরা ৫০ শতাংশ অপচয়ের বেশি ঝুঁকিতে থাকে, যা অপুষ্টির একটি মারাত্মক রূপ, যা দ্রুত ওজন হ্রাস এবং পেশি নষ্ট করে। এই অবস্থা বিশেষ করে ছোট শিশুদের জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে।
বাংলাদেশ শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে রয়েছে যেখানে বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশুখাদ্য দারিদ্র্যের সম্মুখীন। অপর্যাপ্ত পুষ্টির প্রভাবগুলো সারাজীবন স্থায়ী হতে পারে, শিশুদের শিক্ষাগত প্রাপ্তি এবং ভবিষ্যতে উপার্জনের সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে ও দারিদ্র্যের চক্রকে স্থায়ী করতে পারে। এটি শুধু শিশুদেরই ক্ষতি করে না বরং জাতির সার্বিক উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে শিশুখাদ্য দারিদ্র্য সংকটে অবদান রাখার বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক পরিবার পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করার জন্য সংগ্রাম করে, বিশেষ করে আর্থিক বিপর্যয় বা খাদ্য মূল্যস্ফীতির সময়ে।
অভিভাবকদের মধ্যে সঠিকভাবে শিশুদের খাওয়ানোর অভ্যাস সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বৈচিত্র্যময় খাদ্যের গুরুত্ব এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত খাবার প্রদানের সময়কাল।
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনিযুক্ত পানীয়ের আক্রমণাত্মক বিপণন শিশুদের লক্ষ্য করে এবং তাদের খাদ্য পছন্দকে প্রভাবিত করে। এ খাবারগুলোতে প্রায়ই পুষ্টির পরিমাণ কম এবং ক্যালোরি, চিনি, অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং লবণ বেশি থাকে; যা অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং শৈশবকালীন স্থূলতায় অবদান রাখে।
জলবায়ু পরিবর্তন কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করে; যার ফলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং মূল্যের ওঠানামা হয়। এটি পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের, পুষ্টিকর খাবার ক্রয় করা আরও কঠিন করে তোলে। বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিপর্যয়গুলো ফসল এবং জীবিকা ধ্বংস করতে পারে, পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ইউনিসেফ, বাংলাদেশ এবং একই ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন অন্যান্য দেশে শিশুখাদ্য দারিদ্র্য মোকাবিলায় একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে। এ পদ্ধতির জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ শিশুদের পুষ্টির সর্বোত্তম পরিণাম নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব হয়; যার মধ্যে শিশুর সঠিকভাবে খাওয়ানোর পরামর্শ এবং অপুষ্টির প্রাথমিক শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত। এ পরিষেবাগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য অগ্রাধিকার দেয়, বিশেষ করে যারা খাদ্য দারিদ্র্যের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
শিশুদের সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সম্প্রদায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মীদের ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। এই ফ্রন্টলাইন কর্মীরা পিতামাতা ও পরিচর্যাকারীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন; যা তাদের সন্তানদের জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন ও তৈরিতে সহায়তা করে।
শিশুদের সুস্থ ও সমৃদ্ধ জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে শক্তিশালী নীতি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো অপরিহার্য। এই নীতিগুলিকে অবশ্যই শিশু খাদ্য দারিদ্র্যের মূল কারণগুলো, যেমন দারিদ্র্য এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বিপণনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সমাধান করতে হবে।
শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয়ের বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছেÑশিশুদের লক্ষ্য করে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয়ের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। এতে টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব মাধ্যম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকটে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় বিক্রি করা বন্ধ করা। এছাড়া খেলার মাঠ, পার্ক এবং অন্যান্য শিশুবান্ধব এলাকায় এ পণ্যগুলোর বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা উচিত। শিশুদের লক্ষ্য করে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় কোম্পানিদের স্পনসরশিপ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। এর মধ্যে স্কুল, ক্রীড়া দল এবং অন্যান্য শিশু-কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে সরকার শিশুদের অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয়ের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া এটি সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য তাদের উৎসাহিত করতে সাহায্য করবে।
নগদ আর্থিক সহায়তা এবং খাদ্য সহায়তার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দারিদ্র্য বিমোচন ও পুষ্টিকর খাবারে দরিদ্র পরিবারগুলোর প্রবেশাধিকার উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যখন এ প্রোগ্রামগুলো সঠিকভাবে ডিজাইন করা হয় এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়; তখন সেগুলো দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে পারে, তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি দারিদ্র্যের চক্র ভাঙতে পারে।
কার্যকরভাবে শিশু খাদ্য দারিদ্র্য মোকাবিলায় শক্তিশালী তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা অপরিহার্য। এই সিস্টেমগুলো সমস্যার ব্যাপকতা এবং তীব্রতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করে, যা সর্বাধিক প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করতে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করে।
শিশুখাদ্য দারিদ্র্য বৃদ্ধির প্রাথমিক শনাক্তকরণ, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এবং মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে, দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য-চালিত নীতিনির্ধারণ এবং কার্যক্রমগুলো শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে এবং তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে সহায়তা করতে পারে।
ইউনিসেফের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি শিশুখাদ্য দারিদ্র্যের ভয়াবহ সংকট তুলে ধরে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তা মোকাবিলায় দৃঢ? পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জরুরি আহ্বান জানায়। প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি শিশু পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না, যার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
এই সংকট মোকাবিলায় একটি বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতি এবং বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন। সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং নাগরিক সমাজকে অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি শিশু তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যে প্রবেশাধিকার পায়।
শিশুখাদ্য দারিদ্র্য হ্রাসকে অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি, বিশেষ করে বিশ্ব ও জাতীয় পুষ্টি ও উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে। শিশুদের খাদ্য ও পুষ্টির অধিকার সমুন্নত রাখা এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
সকল শিশুর, বিশেষ করে অল্পবয়সীদের জন্য স্বাস্থ্যকর, বৈচিত্র্যময় এবং সাশ্রয়ী মূল্যের খাবারের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা তাদের সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য। দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান খাদ্য ব্যবস্থা প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর খাবারে পূর্ণ থাকে; যার ফলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি, স্থূলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।
শিশুদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা শিশুদের খাদ্যে প্রবেশাধিকার ব্যাহত করতে পারে, তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের উচিত এমন প্রোগ্রামগুলোতে বিনিয়োগ করা; যা বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
শিশুখাদ্য দারিদ্র্য শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি ভয়াবহ বাস্তবতা; যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি শিশুর জীবনকে স্পর্শ করে। পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে, তাদের শিক্ষাগত সুযোগ সীমিত করে এবং তাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। শিশুর সুস্থ শৈশব বিকাশে হুমকি হিসেবে কাজ করে।
এই জটিল সমস্যা মোকাবিলায় একাধিক কারণকে সমাধান করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, অসমতা, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অপর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা।
শিশু খাদ্য দারিদ্র্য মোকাবিলায় সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে হলে সকলের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ প্রয়োজন। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতÑসকলেরই এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের নিজস্ব ভূমিকা পালন করতে হবে।
গবেষক ও উন্নয়নকর্মী