Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 7:23 pm

শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের স্বচ্ছন্দে হেঁটে যাতায়াত নিশ্চিত করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: একটি শহর যদি ৮ বছর এবং ৮০ বছরের মানুষের জন্য নিরাপদ ও প্রবেশগম্য হয়, তাহলে শহরটি সবার জন্যই নিরাপদ ও প্রবেশগম্য। একইভাবে, শিক্ষার্থীদের জন্য হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হলে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলেই উপকৃত হবেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হেঁটে যাতায়াতকে প্রাধান্য দিয়ে নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বানে ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ্যাস্ট্রোজেনেকা, কার ফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী’র সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর সভাপতি আবু নাসের খান, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ মান্নান মনির, ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট এন্ড একাডেমিক আহমাদ আল মুহাইমিন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের লেকচারার নিয়াজ মো জাফরী।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার বলেন, অধিক জায়গা দখল করে কম যাত্রী পরিবহন করায় ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে অসহনীয় যানজট, অধিক জ্বালানী ব্যয়, মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণ, সড়ক দুর্ঘটনা, ইত্যাদি বেড়ে যায়। অসংক্রামক রোগের মূল কারণগুলো হলো- শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, তামাক সেবন, এ্যালকোহল সেবন এবং বায়ু দূষণ। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের দুটি কারণকে প্রতিহত করা সম্ভব।

রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা দূর করে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ তৈরির জন্য তিনটি নকশার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সুপারিশ, যেমন- বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ, সড়কের পাশ থেকে পার্কিং, দোকানের মালামাল অপসারণ, বাসার সামনে সবুজায়ন বৃদ্ধি, সড়কের পাশে পকেট পার্ক তৈরি ইত্যাদি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের শেষে রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এবং সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের ৩০ জন শিক্ষার্থীকে ‘ইয়াং এডভোকেটস অন এনসিডি প্রিভেনশন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যারা তাদের স্কুলে অংসংক্রামন রোগ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে নিয়ে সচেতনতামূল বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করবেন।

সভায় অতিথি আলোচক আবু নাসের খান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া শিশুবান্ধব নগর, অন্তর্ভূক্তিমূলক নগর গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নগরের ৬০ শতাংশ মানুষ কোন না কোন ভাবে হেঁটে যাতায়াত করেন কিন্তু নগর পরিকল্পনায় তাদের উপেক্ষা করে প্রাধান্য দেয়া হয় ৫-৭% জনগণ, যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, সমাজ ব্যবস্থা উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের নগরে শিশুদের খেলার জায়গার পরিবর্তে গাড়ি পার্কিংকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আমরা একটি অসুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলছি এবং বয়স্ক মানুষদের আরো গৃহবন্দী করে ফেলছি। আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।