শীতকালে ত্বকের নানা সমস্যার মধ্যে ঠোঁট ফাটা অন্যতম। এ সময় বাতাসে জলীয় বাষ্প কমে যাওয়ার কারণে ঘাম কম হয়। শরীরের শুকনো জায়গাগুলো তখন কুঁচকে গিয়ে ফেটে যায়। শরীরের অন্য জায়গার তুলনায় আমাদের ঠোঁটের চামড়া পাতলা। তাছাড়া ঠোঁটের অবস্থান নাকের ঠিক নিচে থাকার জন্য নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে আসা গরম বাতাস ঠোঁট দুটোকে আরও শুকিয়ে দেয়। এতে শরীরের অন্য জায়গার তুলনায় ঠোঁট বেশি ফাটে। এ ছাড়া ঠোঁট ফাটার আরও কারণ হলো কড়া সূর্যের আলোয় বেশিক্ষণ থাকা, অ্যালার্জি, থাইরয়েডের সমস্যা ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব।
ঠোঁট ফাটা ঠেকাতে অনেকেই চ্যাপস্টিক আর লিপবাম ব্যবহার করেন। এসব উপাদান হয়তো সাময়িক স্বস্তি দেয়, তা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। লিপবাম বা চ্যাপস্টিকের বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক উপায়ে ঠোঁট ফাটা ঠেকাতে পারেন।
করণীয়: ১. ঠোঁট ফাটা ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরেই নারকেল তেলের ব্যবহার দেখা যায়। এতে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করে। ঠোঁট ফাটা ঠেকাতে নিয়মিত নারকেল তেল লাগাতে পারেন। ২. অলিভ অয়েল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে পরিচিত। এতে যে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, তা ত্বকের শুষ্কতা দূর ও ঠোঁট ফাটা ঠেকাতে পারে। দিনে দুবার ঠোঁটে অলিভ অয়েল মাখলে ঠোঁট নরম ও মসৃণ হবে। ৩. পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, যাতে ঠোঁটের ত্বকে আর্দ্রতা বজায় থাকবে। ৪. অনেকেই অভ্যাসবশত রুক্ষ ঠোঁট কিছুক্ষণ পরপর জিব দিয়ে ভিজিয়ে থাকেন, চামড়া উঠলে নখ দিয়ে তোলেনÑএসব করবেন না। ৫. ভিটামিন বি’র অভাবও কিন্তু রুক্ষ ঠোঁটের কারণ হতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে শীতের শাকসবজি খান। ৬. ঠোঁটের প্রদাহজনিত রোগগুলোর একটি হলো এক্সফলিয়েটিভ চিলাইটিস। চিলাইটিস বলতে ঠোঁটের প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া বোঝায়। এ রোগের ক্ষেত্রে ঠোঁটের ওপরের চামড়া বা মিউকাস মেমব্রেন শুকিয়ে যায় ও উঠে যায়, যা ক্ষতস্থানের মতো দেখা যায়। কখনোই ঠোঁট কামড়াবেন না, অথবা ঠোঁট চুষবেন না। এ রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ স্টেরয়েড ক্রিম নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া গ্লিসারিন বোরাক্স এক্সফলিয়েটিভ চিলাইটিস ঠোঁটের প্রদাহের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। ভিটামিন ডি সেবন করা যেতে পারে।
-ডা. জাহেদ পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ