Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 10:23 pm

শীতকালে ডিপথেরিয়া

শীতকালে ডিপথেরিয়ার প্রকট বেশি দেখা যায়। এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ রোগ, যা নাক ও গলার শ্বসন ঝিল্লিকে প্রভাবিত করে। এর সঠিক চিকিৎসা না হলে কিডনি, স্নায়ুতন্ত্রসহ হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এমনকি এ রোগে দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডিপথেরিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে টনসিল। রোগটি প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট টিকা রয়েছে। টিকা নিলে ডিপথেরিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় শিশুদের নিয়মিতভাবে ডিপথেরিয়ার টিকা দেওয়া হয়। ফলে এ রোগের প্রভাব সেখানে খুবই কম। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোয় রোগটির প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশে এখনও ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়।

কারণ
করনিব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরি নামে ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী। এ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত গলা ও শ্বাসনালিকে আক্রমণ করে। ডিপথেরিয়া প্রায় সবারই হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরাই আক্রান্ত হয়। শীতকালে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, এ সময় ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ যেমন হাঁচি, কাশি হলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে, যা বাতাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। মূলত তখন এ রোগটি দেখা দেয়।

লক্ষণ
আক্রমণের প্রায় দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো লক্ষ্য করা যায়। তবে অনেক সময় বোঝা যায় না, শুধু শরীরে হালকা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। ডিপথেরিয়া হলে সর্বপ্রথম টনসিলে সমস্যা হয়। এছাড়া ডিপথেরিয়ার বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। জ্বর, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ঘাড় ফুলে যাওয়া, কাশিতে তুলনামূলক বেশি শব্দ হওয়া, গলায় ঘা হওয়া, টনসিলে ধূসর রঙের পর্দা পড়ে কিংবা ছত্রাকজাতীয় কিছু দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া খাবার খেতে সমস্যা হয়, ত্বক নীলাভ হয়ে যায়, সব সময় অস্বস্তি লাগে, শ্বাস নিতে অসুবিধা, সর্দি লেগে থাকা প্রভৃতি।

চিকিৎসা
ডিপথেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে অ্যান্টি-টক্সিন দিতে হয়। এটি ব্যাকটেরিয়ায় তৈরি বিষাক্ত উপাদানগুলোকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে। তবে অ্যান্টি-টক্সিন দেওয়ার আগে রোগীর যদি কোনো ধরনের এলার্জি থাকে, তাহলে চিকিৎসককে জানাতে হবে। কারণ এলার্জি থাকলে সরাসরি অ্যান্টি-টক্সিন দিলে সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনও পড়তে পারে।

প্রতিরোধ
ডিপথেরিয়া প্রতিরোধের প্রধান উপায় টিকা। এ টিকাকে ‘ডিআইপি’ বলা হয়। সাধারণত শিশুদের দুই মাস, চার মাস, ছয় মাস, ১৫ থেকে ১৯ মাস ও চার থেকে ছয় বছর বয়সে দেওয়া হয়। এই টিকার ক্ষমতা ১০ বছর পর্যন্ত থাকে। সুতরাং ১২ বছর বয়সের কাছাকাছি আবারও টিকার বুস্টার ডোজ দিতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পার্টুসিস ও টিটেনাস টিকা দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসক।