ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ। এডিস মশা এ রোগের জীবাণু বহন করে। আর এডিস মশার বংশ বিস্তার হয় সাধারণত বর্ষাকালে। এ সময় বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা ডিম নিষিক্ত করার মাধ্যমে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। তবে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ও এর ফলে মৃত্যুর হার অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এমনকি ডেঙ্গু বর্ষাকালের রোগ হলেও এবার শীতেও এর প্রাদুর্ভাব চরম আকার ধারণ করেছে। কী কারণে এবার শীতেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও এর ফলে মৃত্যুর উচ্চহার পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা অনুসন্ধান করা আবশ্যক বলে মনে করি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘১৭ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৬০ জন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ডেঙ্গুতে চলতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮২ জনে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ১৯ হাজার ২৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ১ লাখ ৯ হাজার ৫১১ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ লাখ ৯ হাজার ৭২৫ জন। মারা যাওয়া ১ হাজার ৬৮২ জনের মধ্যে নারী ৯৬৪ জন এবং পুরুষ ৭১৮ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৭১২ জন এবং রাজধানীতে ৯৭০ জন।
একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারীদের ৪০ শতাংশের বেশি গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। এতদিন ডেঙ্গু একটি শহুরে রোগ হিসেবেই পরিগণিত হতো। কিন্তু এখন এটি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম-গঞ্জে। এমনকি ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা তার চরিত্র বদল করেছে বলেও জানা যাচ্ছে গবেষণায়। আগে এটি কেবল দিনের বেলায় কামড়ালেও এখন রাতেও কামড়ায় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে এডিস মশা নিধনে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক।
এ পর্যন্ত পৃথিবীতে যতগুলো মহামারি সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন মশার কামড় থেকে সৃষ্ট মহামারি ও মশাবাহিত রোগের কারণে (বার্ধক্যজনিত ও স্বাভাবিক মৃত্যু ব্যতীত)। কাজেই মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মশা নিধন করা অতীব জরুরি। এই মশা নিধনে একেক দেশ একেক ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হয়েছে। একটি দেশে মশা নিধনে কোন পদ্ধতি ফলপ্রসূ হবে, তা বাছাই করতে হলে যথাযথ গবেষণা পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সে ধরনের গবেষণার ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মশা নিধনে সফলতা অর্জনকারী দেশগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে মশা নিধনে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক বলে মনে করি। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে মনোযোগী হবেন বলেই প্রত্যাশা।
