শীতের আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত জয়পুরহাটের কৃষকরা

প্রতিনিধি, জয়পুরহাট: শীত আসতে এখনও দুমাস। এর মধ্যেই শীতের আগাম সবজির চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। গ্রামের মাঠে মাঠে এখন শীতের সবজি। এর মধ্যেই অনেক কৃষকের ক্ষেতের চারা বড় হয়ে গেছে। তারা এখন এসব পরিচর্যায় ব্যস্ত শীত নামার আগেই পর্যায়ক্রমে এসব সবজি পুরাপুরি বাজারে আসবে বলছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগের আশা শীতের আগাম সবজিতে লাভবান হবেন কৃষক।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলার পাঁচটি উপজেলায় শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১৫ হেক্টর। জেলায় এ বছর ১২০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ হচ্ছে। জেলাতে শীতের আগাম সবজি হবে তিন হাজার ২২০ মেট্রিক টন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার আউশগাড়া, পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসুলপুর, আক্কেলপুর উপজেলার মাতাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে কৃষকরা ব্যস্ত জমি তৈরি ও সবজির চারা রোপণে এবং বাধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, মুলা ও শিম লাগানোর ও পরিচর্যার কাজে।

শীতের আগাম সবজিতে পরিশ্রম বেশি হলেও লাভ একটু বেশি, তাই এ সময় সবজি চাষে তাদের মনোযোগ একটু বেশি। আগাম সবজি চাষ লাভজনক হলেও প্রতি বছর বাড়ছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ। এসব খরচ কমাতে পারলে লাভ আরও বেশি হবে বলে জানান কৃষকরা। কৃষকরা জানান, পুরো শীতের সময়েই বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। এ কারণে তারা শীত শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। তারা বরাবরই শাক-সবজি চাষ করে আসছেন। এতে তারা সফলও হয়েছেন।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের কৃষক সুমন রহমান বলেন, শীতের আগেই শীতকালীন সবজি বাজারে তুলতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যায়। এ সময়টায় সবজির চাহিদা বেশি থাকে। তাই আগাম সবজির চাষাবাদ শুরু করেছি। ৩০ শতাংশ জমিতে ফুলকপির চারা লাগিয়েছি। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ফুল আসবে। আশা করি, এক মাসের মধ্যেই বাজারে বিক্রি করতে পারব। এছাড়া ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটোর চারা লাগিয়েছি। দুই মাস পর গাছ থেকে টমেটো তুলতে পারব। ১৮ শতাংশ জমিতে লাগানো কাঁচা মরিচ গাছে ফুল এসেছে, এক মাসের মাথায় ফলন তোলা শুরু হবে।

জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসুলপুর গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, সবজি চাষ করে আমার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। আমরা এখন স্বাবলম্বী। এখন আমাদের শাকসবজি বিক্রির জন্য হাটবাজারে যেতে হয় না। ক্ষেত থেকেই পাইকাররা ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যান। দামও ভালো পাওয়া যায়। এখানে প্রায় সব ধরনের শাকসবজি চাষ হয়। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন পাইকারা।

আক্কেলপুর উপজেলার মাতাপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ৩০ শতাংশ জমিতে লালশাকের বীজ বুনেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে তুলতে পারব। ১৮ শতাংশ জমিতে ফুলকপি ও ১৫ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছি। সদর উপজেলার আউশগাড়া গ্রামের কৃষক মহসীন আলী বলেন, আমরা মৌসুমের আগে আগে শীতের সবজি আবাদ করি। খরচ একটু বেশি পড়ে। কিন্তু বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম জানান, আগাম জাতের সবজি চাষ বেশ লাভ জনক হওয়ায় জয়পুরহাটে প্রচুর সবজি চাষ করা হয়। কৃষকরা এখন আগাম শীতকালীন সবজি টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, বেগুন, লালশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু করেছেন। সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার, জৈব সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারের জন্য তাদের নানা পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০