অন্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে শিশুদের রোগবালাই বেড়ে যায়। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হতে পারে তারা। এ সময় বাতাসে ধুলোবালির সঙ্গে রোগজীবাণুর সংক্রমণও বাড়তে থাকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা জ্বর, কাশি প্রভৃতিতে আক্রান্ত হতে পারে। তাই মা-বাবাকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। রোগের কারণ, প্রকৃতি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হয়
নিউমোনিয়া
নিউমোনিয়া ফুসফুসের এক ধরনের ইনফেকশন। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়ার প্রবণতা বেশি। শিশুদের ফুসফুসের রোগÑযেমন অ্যাজমা, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ফুসফুসে ইনফেকশন হয়। এ সময় শিশুদের সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর হতে পারে। কয়েকটি বিশেষ লক্ষণ থেকে বোঝা যায় শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কি-না। যেমন সর্দি-কাশি, জ্বরের সঙ্গে শিশু খুব দ্রæত নিঃশ্বাস ফেললে বুঝতে হবে এটা সাধারণ সর্দিজ্বর নয়। এছাড়া শান্ত থাকা অবস্থায় শিশুর যদি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নিঃশ্বাস নিতে গেলে ঘড়ঘড় আওয়াজ হয়, তাহলে তা নিউমোনিয়ার লক্ষণ। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় পেট ভেতরে ঢুকে যাবে, নাক ফুলে উঠবে। মুখ ও ঠোঁটের চার পাশ নীল হয়, সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বরও হতে পারে। এমন অবস্থায় শিশুকে দ্রæত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
ডায়রিয়া
ডায়রিয়ার প্রকোপ অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুঘটিত, ভাইরাসজনিত, ছত্রাক বা ফাংগাস জাতীয় প্রদাহ ও আক্রমণ এর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে মারাত্মক হলো টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড ও ব্যাকটেরিয়াজনিত ডায়রিয়া, পেটের পীড়া। আক্রান্ত শিশুর পেটের পীড়া ও ডায়রিয়ার সঙ্গে জ্বরও হতে পারে। কলেরার কারণে বেশি পাতলা পায়খানা হলে এবং শরীর থেকে বেশি ফ্লু নির্গত হলে তা শিশুর শরীরের জন্য মারাত্মক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
ব্রংকিওলাইটিস
ব্রংকিওলাইটিস শিশুদের ফুসফুসের একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যাতে আক্রান্ত শিশু ভয়ানক কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগে। সাধারণত দুবছরের কম বয়সী শিশুরা, প্রধানত যাদের বয়স ছয় মাসের কম, তারাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেসব শিশুর মায়ের বুকের দুধ পান করানো হয়নি, যারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকে, যাদের জšে§র সময় ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম ছিলÑতারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুর নাক দিয়ে পানি ঝরে, হাঁচি থাকে, সঙ্গে হালকা জ্বরও থাকতে পারে। পরবর্তী সময়ে কাশি, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকের খাঁচা দেবে যাওয়া, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাঁশির আওয়াজের মতো এক ধরনের শব্দও হতে পারে। আক্রান্ত শিশুরা
অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে, অস্থির থাকে। শ্বাসকষ্টের জন্য তাদের খেতে ও ঘুমাতে সমস্যা হতে পারে। কারও কারও দ্রæত শ্বাসের সঙ্গে হƒৎস্পন্দনও বেড়ে যায়।
সর্দি-কাশি
শীত এলেই সর্দি-কাশি, কমন কোল্ড বা ঠাণ্ডা জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জার মাধ্যমে এ রোগের সৃষ্টি। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস, লালা, কাশি বা হাঁচি থেকে নিঃসরিত ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমণ হয়। ফলে জ্বর, গলাব্যথা, চুষে খাবার খেতে অনীহা বা সমস্যা, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে অনবরত সর্দি নিঃসৃত হওয়া, খুশখুশে কাশি অনুভ‚ত হয়। অনেক সময় খাবারে অরুচি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুকে বিশ্রাম দিতে হবে।
হাঁপানি
হাঁপানি শ্বাসনালির এক ধরনের অ্যালার্জি। শিশুর
শ্বাসনালি কোনো জিনিসের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হলে কাশি বা শ্বাসকষ্ট হয়। শিশুর সামনে ধূমপান করলে, ভাইরাসে শ্বাসনালি সংক্রমিত হলে, শীতের অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বাতাস লাগলে, আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময়, যখন বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, তখন শিশুর হাঁপানির প্রকোপ বেড়ে যায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছেÑখুব বেশি কাশি, এক মাসের বেশি সময় ধরে কাশি, বুকের দুধ টেনে খেতে কষ্ট বা অন্য খাবার খেতে অসুবিধা, বুকের পাঁজরের নিচের দিক ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া, অস্থিরতা, কাশি বা শ্বাসকষ্টের সঙ্গে হাত বা পায়ের আঙুল নীল হয়ে যাওয়া। ঘরে অতিরিক্ত আসবাবপত্র, কার্পেট রাখবেন না। পালকযুক্ত পোশাক বা খেলনা শিশুকে দেবেন না। ধোঁয়া, ধুলা, ফুল বা ঘাসের রেণু আছেÑএমন স্থানে শিশুকে নিয়ে যাবেন না। শিশুর সামনে বা পাশে বসে ধূমপান করবেন না।
ডা. সাদাত ইবনে মালেক
সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, ঢাকা