শীর্ষস্থানীয় জাতীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার লক্ষ্যে বাপেক্স

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের সংক্ষিপ্ত রূপ বাপেক্স। ১৯৮৯ সালের ১ জুলাই পথচলা শুরু বাপেক্সের। তৎকালীন সরকার দেশের অভ্যন্তরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম গতিশীল করার উদ্যোগ নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলার অনুসন্ধান পরিদফতরকে অবলুপ্ত করে বাপেক্স নামে পেট্রোবাংলার অধীনে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। এরপর ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটির

কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা হয়। মূলত বাপেক্সকে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয় সরকার। এজন্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠন করা হয় বাপেক্স। এ ধারাবাহিকতায় সরকারের বরাদ্দ করা নির্ধারিত অংশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও খনন শুরু করে তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার সালদা নদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর ও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু করে।

বর্তমানে বাপেক্সের ছয়টি নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এগুলোর অবস্থান সালদা নদী, ফেঞ্চুগঞ্জ, শাহবাজপুর, খাগড়াছড়ির সেমুতাং, নোয়াখালীর শাহজাদপুর-সুন্দলপুর ও বেগমগঞ্জে। এ ছয়টি গ্যাসক্ষেত্র হতে প্রতিদিন ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয় ।

দেশে জ্বালানি চাহিদা বেড়েই চলেছে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা পূরণে সচেষ্ট বাপেক্স। তাই এ প্রতিষ্ঠানকে দেশের স্থলভাগে অবস্থিত দুটি অনুসন্ধান ব্লক (৪ ও ১১) এবং কিছু ভূকাঠামো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

শুধু নিজেদের খনন ও উৎপাদন কার্যক্রমে থেমে নেই তারা। শুরু থেকেই পেট্রোবাংলার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের খনন ও ওয়ার্ক-ওভারসহ নানা কারিগরি সেবাও প্রদান করে আসছে। প্রসঙ্গত, পেট্রোবাংলার অধীনে বিজিএফসিএল (বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড) ও এসজিএফএল (সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড) নামে দুটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে রাষ্ট্রীয় অনুসন্ধান ও উৎপাদনে বাপেক্সের সমকক্ষ আর নেই। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে তাদের সফলতার হার অনেক বেশি।

বাপেক্সে রয়েছে দক্ষ জনবল। প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৯১ কর্মকর্তা ও ৪৪৬ কর্মী রয়েছেন। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন নাজিমউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব।

খনন ও ওয়ার্ক-ওভারের পাশাপাশি পূর্ত উন্নয়ন, মালামাল রক্ষণাবেক্ষণ, কূপে নানা কারিগরি সেবা প্রদান ও গবেষণা পরিচালনা করে আসছে বাপেক্স। প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন পরীক্ষাগার রয়েছে। যেমন জৈব স্তরতত্ত্ব, পললতত্ত্ব, ভূরসায়ন, এক্স-আরডি প্রভৃতি। ফলে তাদের কার্যক্রমের ওপর নিশ্চিন্তে নির্ভর করা যায়।

ভিশন

টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে শীর্ষস্থানীয় জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সক্ষমতা অর্জন করা।

মিশন

কারিগরি ও আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূতাত্ত্বিক, ভূপদার্থিক, খননসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা।

সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড

অনুসন্ধানমূলক কূপ খনন: সুন্দলপুর-১, শ্রীকাইল-২, রূপগঞ্জ-১, কাপাসিয়া-১, সুনেত্র-১, মুবারকপুর-১

উন্নয়ন কূপ খনন: ফেঞ্চুগঞ্জ-৪, সালদা

নদী-৩, তিতাস-১৭, ১৮ ও ২৭ ও বাখরাবাদ-৯ (বিজিএফসিএল),

কৈলাশটিলা-৭ (এসজিএফএল)

ওয়ার্ক-ওভার অপারেশনস: ১৫ কূপ

বিজিএফসিএল ও এসজিএফএলের

জন্য ১৪৪৭ স্কয়ার কিলোমিটার থ্রিডি সিসমিক সার্ভে

সুনেত্র ও শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড গঠনের ওপর ৯০ স্কয়ার কিলোমিটার থ্রিডি সিসমিক সার্ভে

দেশের নানা স্থানে তেল ও গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা যাচাই করে বাপেক্স। এজন্য তারা ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করে। এ জরিপের ফলভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে ভূপদার্থিক জরিপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ কাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আহরণ করে। বর্তমানে ২ডি ও থ্রিডি ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে ভূগর্ভের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলতে সক্ষম তারা। তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করার পর প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণ করে তারা। এভাবে সম্ভাব্য খনন স্থান নির্ধারণ করা হয়।

চলমান প্রকল্প

মোবারকপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান খনন প্রকল্প

বাপেক্সের গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন প্রকল্প

শাহবাজপুর ফিল্ডের গ্যাস প্রসেস প্লান্ট ক্রয়

১৫০০ এইচপি রিগ সংগ্রহ প্রকল্প

রূপগঞ্জ তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ প্রকল্প

থ্রিডি সিসমিক প্রজেক্ট

২ডি সিসমিক প্রজেক্ট

স্ট্যান্ডবাই গ্যাস প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ

শ্রীকাইল গ্যাসফিল্ডে প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ

শাহবাজপুর-সুন্দলপুর (সুন্দলপুর-২) উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্প

লক্ষ্য ও কর্মকৌশল

ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ও মুনাফা অর্জন

পরিবেশ সুরক্ষা

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন কর্মপরিল্পনা প্রণয়ন

পুরস্কার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি পদক-২০১৪ অর্জন করেছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও উৎপাদন কার্যক্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় জ্বালানি নিরাপত্তা বিধানে প্রচেষ্টা এবং ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার পায় বাপেক্স।