শীর্ষে লংকাবাংলা-আইসিবি পুঁজিবাজারে ইস্যু আনতে ব্যর্থ অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক

নাজমুল ইসলাম ফারুকঃ দেশে বর্তমানে ৫৪টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংকই পুঁজিবাজারে নতুন ইস্যু আনতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে যে কয়টি মার্চেন্ট ব্যাংক ইস্যু আনছে, এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এরপর রয়েছে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট ও অ্যালিয়েন্স ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস। তবে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইস্যু এনেছে এএফসি ক্যাপিটাল ও ইম্পিরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড। গত তিন বছরের তথ্য পর্যালোচনায় এমনটিই জানা গেছে।
এদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়মানুযায়ী ইস্যুর প্রস্তাব জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের কারণ দর্শানো নোটিস দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। জবাবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোও ইস্যু দাখিল করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বরাবর চিঠি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রদত্ত ব্যাখ্যা পর্যালোচনা করে ইস্যু আনতে ও জমা দিতে ব্যর্থ মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বিএসইসি ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘যেসব মার্চেন্ট ব্যাংক নিয়মানুয়ায়ী ইস্যুর প্রস্তাব জমা দেয়নি, তাদের নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তারাও নোটিসের ব্যাখ্যা দিয়েছে। তবে কমিশন কার্যালয় পরিবর্তনের কারণে সেগুলো পর্যালোচনা করতে সময় লাগছে। তবে ব্যাখ্যাগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কমিশন।’
গত তিন বছরের স্টক এক্সচেঞ্জে দেওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিন বছরে ৩৯টি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড পাঁচটি, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড চারটি কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে এককভাবে কাজ করেছে। তার পরপরই অবস্থান করছে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও অ্যালিয়েন্স ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। এ মার্চেন্ট ব্যাংক দুটি প্রত্যেকে এককভাবে আলোচিত সময়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানের ইস্যু ম্যানেজারেরর কাজ করেছে। এছাড়া যৌথভাবে চারটি ইস্যু বাজারে এনে শীর্ষে উঠে এসেছে এএফসি ক্যাপিটাল এবং ইম্পিরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড।
আলোচিত সময়ে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড যেসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দি পেনিনসুলা চিটাগং লিমিটেড, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, আমান ফিড লিমিটেড, ইভেন্স টেক্সটাইল লিমিটেড ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
অন্যদিকে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড যেসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে হামিদ ফেব্রিক্স লিমিটেড, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড, সুহƒদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও এক্মি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। এছাড়া আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড যেসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছে, সেগুলো হলোÑফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড
ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মতিন স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
অ্যালিয়েন্স ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেড, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে। যৌথভাবে এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড এবং ইম্পিরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড দুটি মার্চেন্ট ব্যাংক যেসব ইস্যু বাজারে এনেছে, সেগুলো হলো: তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শাশা ডেনিমস লিমিটেড, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেড।
এছাড়া এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড ও বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড সমন্বিতভাবে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে। প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডÑএ তিনটি মার্চেন্ট ব্যাংক মিলে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের, জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড দুই প্রতিষ্ঠান মিলে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছে।
অন্যদিকে সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের মাধ্যমে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটিজ সার্ভিসেস লিমিটেড। হা ওয়েল টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেডকে বাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, সঙ্গে কো-ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে সিটিজেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড দায়িত্ব পালন করছে।
এএফসি এগ্রো বায়োটেক লিমিটেড কোম্পানিকে বাজারে আনতে ইম্পিরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেডের সঙ্গে কো-ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে সিগমা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কাজ করেছে। আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কো-ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড কাজ করে মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেডকে বাজারে এনেছে। এছাড়া ইনফরমেশন টেকনোলজি কনসালটেন্টস লিমিটেড কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব ছিল বিটাওয়ান ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড এবং সিএপিএম অ্যাডভাইজরি লিমিটেড যৌথভাবে অলিম্পিক এক্সেসরিজ বাজারে তালিকাভুক্তির কাজ করছে। জাহিন স্পিনিংয়ের ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড। আইসিবি এবং পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্টস মিলে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিল ন্যাশনাল ফিড মিলের।
ইম্পিরিয়াল ক্যাপিটালের সঙ্গে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট যৌথভাবে ইস্যু এনেছে ফরচুন সুজ লিমিটেডের। ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড বাজারে তালিকাভুক্তিতে ইস্যু ম্যানেজারের কাজ করেছে ইম্পিরিয়াল এবং এফএএস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। তাছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ইস্যু ম্যানেজারের কাজ করেছে প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। ড্রাগন সোয়েটার লিমিটেডের ইস্যু ম্যানেজারের কাজ করেছে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট। এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানির। ইফাদ অটোস লিমিটেডকে বাজারে আনতে আলফা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং বেনকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড যৌথভাবে ইস্যু ম্যানেজারের কাজ করেছে। এছাড়া অ্যালিয়েন্স ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও আইসিবি যৌথভাবে বাজারে ডরিন পাওয়ার কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, পোর্টফোলিও গঠন ও অন্যান্য সেবার পাশাপাশি পাবলিক ইস্যুর প্রস্তাব জমার দায়িত্ব দিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকের নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শর্তানুযায়ী, প্রতিটি মার্চেন্ট ব্যাংককে দুবছরের মধ্যে কমপক্ষে একটি পাবলিক ইস্যুর প্রস্তাব জমা ও প্রতি বছর নিজস্ব পোর্টফোলিওর বাইরে কমপক্ষে পাঁচটি নতুন পোর্টফোলিও গঠন করতে হয়। পোর্টফোলিও গঠনে মোটামুটি সফল হলেও পাবলিক ইস্যুর ক্ষেত্রে শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়েছে প্রায় ২০টির বেশি মার্চেন্ট ব্যাংক।
উল্লেখ্য, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা ১৯৯৬-এর বিধি ৭-এর ১১ ধারার ‘গ’ উপধারায় বলা হয়েছে, ইস্যু ম্যানেজার কর্তৃক প্রতি ইংরেজি পঞ্জিকা বছরে নিজস্ব পোর্টফোলিওর বাইরে কমপক্ষে পাঁচটি নতুন পোর্টফোলিও ও দুটি পঞ্জিকা বছরের মধ্যে ন্যূনতম একটি পাবলিক ইস্যুর দালিলিক প্রস্তাব কমিশনে দাখিল করতে হবে।
অথচ এককভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইস্যু আনার কাজ করলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার কাজ করতে দেখা গেছে। তবুও অনেক প্রতিষ্ঠানই রয়েছে, যারা ইস্যু জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।