মেহেদী হাসান: শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির ওপর চাপ বাড়ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে ঋণ আদায়ে সরকারের সমর্থন জোরালো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে শিগগিরই বৈঠকে বসবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
সূত্র জানায়, শীর্ষ ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে অবগত হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে আগামী রোববার বৈঠকে বসছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকটি হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের থাকতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ ঋণখেলাপিদের নিয়ে বিশেষ ওই বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অগ্রিম আমানত অনুপাত, খেলাপি ঋণ, ঋণ অবলোপন, এসএমই ঋণ বিতরণ, কৃষিঋণ বিতরণ নিয়ে আলোচনা হবে।
জানা গেছে, খেলাপি ঋণসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে ব্যাংকগুলোর সুশাসন নিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর অবনতি ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে শীর্ষ খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়। খেলাপি ঋণের বড় অংশই আটকে আছে এসব শীর্ষ খেলাপির কাছে।
সূত্র জানায়, প্রতিটি ব্যাংকে শীর্ষ ২০ জন করে খেলাপি গ্রাহকের কাছে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে আটকা পড়েছে ৩২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশ শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। এ ঋণের বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ কম। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর পদক্ষেপ খুব বেশি জোরালো নয়। কিন্তু ২০১৮ সালের জন্য ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ভিত্তিতে শীর্ষ ২০ খেলাপি ঋণের তদারকি করছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তির আলোকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগও তৎপর হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে। ঋণ আদায় কার্যক্রমে খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ বাড়বে।’
সর্বশেষ তথ্যমতে, শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে সোনালী ব্যাংকের আটকা ছিল তিন হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা ছিল এক হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের দুই হাজার ২১৮ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংকের দুই হাজার ২৩২ কোটি টাকা। জানা গেছে, খেলাপি ঋণের লাগাম কোনোভাবেই টানতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ গভর্নর ফজলে কবিরও।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিশেষ নীতিমালা করে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দীর্ঘ মেয়াদে পুনর্গঠন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ জমা ছাড়াই ঋণ পুনঃতফসিল করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খেলাপি ঋণ কমাতে ডিসেম্বরের শেষদিকে বন্ধের দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক খোলা রেখে ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কমছে না খেলাপি ঋণ। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এ তথ্য খেলাপির হিসাবে নিলে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ আরও বাড়বে।