‘শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা প্রয়োজন’

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: সাগরে আহরণকৃত মাছের প্রায় ৬০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। এ সব মাছের মান নিশ্চিতকরণে প্রক্রিয়াকৃত শুঁটকি মাছে ফুড ভ্যালু চার্ট সংযুক্ত হলে বিপুল পরিমাণে অর্থ উপার্জন হবে। তাই এ ধরনের শিল্প স্থাপনে সরকারি অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ, অর্থায়ন সুবিধা নিশ্চিত করা, বিদ্যুতের পাশাপাশি ডুয়েল ফুয়েল সিস্টেম বিবেচনা করা এবং মাছের সেল্ফ লাইফ দীর্ঘায়িত করা হলে এ খাতে ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আছে। 

গতকাল দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) যৌথ উদ্যোগে “নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি ও শিল্প স্থাপনে সহায়তাকরণ” শীর্ষক সেমিনার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। বক্তব্য রাখেন চেম্বার পরিচালক অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি মো. টিপু সুলতান শিকদার, মাসুদ ফিশ প্রসেসিং অ্যান্ড আইস কমপ্লেক্স লি. এর নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুল হাই, হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের সিইও সৈয়দ মুহাম্মদ শোয়েব হাসান, কেয়ার কেমিক্যালসের চিফ কনসালট্যান্ট শ্যামল চৌধুরী, মেরিডিয়ান গ্রুপের ম্যানেজার (সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট) মোহাম্মদ কলিম উদ্দিন, রিভারেইন ফিশ অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং ইন্ডা. লি. এর ম্যানেজার শেখ মোকাম্মেল হক চৌধুরী ও বিডি সি ফুড লি. এর এজিএম (অপারেশন্স) ফারুক উদ্দিন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিসিএসআইআরের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ট্রান্সফারের (আইটিটিআই) অফিসার ইনচার্জ অ্যান্ড প্রজেক্ট ডিরেক্টর রেজাউল করিম।

সেমিনারে অংশ নেন বিসিএসআইআরের ডিরেক্টর-চট্টগ্রাম ড. মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএসও ড. মো. রকিবুল হাসান, এসওএসএম রশিদুল ইসলাম ও মিশু আচার্য্যসহ চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

চিটাগং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিসিএসআইআরের মতো এ ধরনের বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্ভাবিত জনপ্রিয় খাদ্য শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সাগর উপকূলবর্তী দেশসমূহে শুঁটকি মাছ অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। আমাদের দেশে প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির সমস্যার কারণে এ খাদ্য বিষয়ে ভোক্তাদের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে এসডিজি অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে নিরাপদ খাদ্য অন্তর্ভুক্ত। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। বঙ্গোপসাগরে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন এবং প্রজননকালে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নসহ সরকারি বিভিন্ন নীতিমালার কারণে বাংলাদেশে মাছের প্রজনন ও মাছ আহরণের সুযোগ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। শুঁটকিকরণ প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে বিশেষ করে বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহারের ফলে এ মাছের স্বাদ হারিয়ে যাচ্ছে এবং আমদানির পরিমাণ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে শুঁটকি মাছের পুষ্টিগুণ ও স্বাদ অক্ষুণœ রাখা সম্ভব হলে স্থানীয় চাহিদা মেটানো ও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে এই শিল্প স্থাপনে রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানান।

বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ বলেন, বিজ্ঞান গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি উদ্ভাবনপূর্বক নতুন নতুন পণ্য তৈরিতে সহায়তা করা এবং জনসেবায় তা নিয়োজিত করা বিসিএসআইআরের মূল কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় শুঁটকি মাছ উৎপাদনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ড্রায়ার উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমাদের দেশে শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি প্রক্রিয়া করা হলেও বর্ষা মৌসুমে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে  মাছের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাই দেশীয় চাহিদা পূরণ ও আমদানির সুযোগ সৃষ্টিতে পুষ্টিগুণসম্পন্ন কেমিক্যালমুক্ত শুঁটকি মাছ উৎপাদনে বিসিএসআইআর এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০