শুচিবায়ু একটি মানসিক রোগ

 

চিন্তা বা টেনশন করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কম-বেশি টেনশনে ভোগেন সবাই। কিন্তু এই টেনশনের কারণে যখন কারও কাজে ব্যাঘাত ঘটে, ঘুমের সমস্যা হয়, লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটে, তখন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো উচিত। সবশেষে দেখা যায়, রোগীটি সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ মেনে ওষুধ ও বিহেভিয়ার থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন করছেন। আসলে তিনি যে রোগে ভুগছেন সে রোগের নাম অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি)। শুচিবায়ুকে হিককাপ অব মাইন্ড (মনের ঢেকুর) বলে। জীবনে যে কোনো সময়ে দুই থেকে তিন শতাংশ মানুষ এ শুচিবায়ুতে আক্রান্ত হতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে যে পরিমাণ মানসিক রোগী আসে, তার ১০ শতাংশ এ ধরনের রোগী। পুরুষ ও নারী সমানভাবে আক্রান্ত হয়, তবে টিনএজারদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। রোগটি সাধারণত বেশি হয় ২০ বছর বয়সে। বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিতরা বেশি ভোগে এ রোগে।

যেকোনো বিষয়ে মনের মাঝে বারবার আসা চিন্তাকেই ‘অবসেশন’ বলে। যদিও অবসেশন মানুষের একটি সহজাত ধর্ম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি মনের অজান্তে থাকে। একে ‘আবিষ্কারের নেশা’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দেওয়া যায়। কেননা চিন্তাটি বারবার মনে এসে একটি তাড়না তৈরি করে বলেই মানুষ কিছু আবিষ্কার করতে পারে, সেটি যা-ই হোক।

অবসেশন বা এ ধরনের চিন্তার বিষয় যে কোনো কিছু হতে পারে। ভালো-মন্দ, সুন্দর-অসুন্দর বা নতুন কিছু সব ধরনের চিন্তা মনে আসতে পারে। তবে রোগের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ওসিডি’র ক্ষেত্রে চিন্তার বিষয়গুলো সাধারণত হয় ময়লা, ধর্ম, যৌনতা, বিভিন্ন রকমের রোগ, রাগ প্রভৃতি নিয়ে।

ধরা যাক, ধর্ম বা যৌনতা নিয়ে অস্বাভাবিক কোনো একটি চিন্তা বারবার কারও মনে আসছে, যেটিকে তিনি ‘সত্য নয়’ বলেই জানেন; যেটিকে তিনি বারবার মন থেকে সরাতে চাচ্ছেন, কিন্তু সরছে না। তখন তার মনের অবস্থা কী হতে পারে?

 

কীভাবে বুঝবেন শুচিবায়ুতে ভুগছেন

এই রোগের দুটি অংশ। প্রথম অংশটি হলো বারবার একই চিন্তা আসা। রোগীরা প্রায়ই বলে থাকে, ডাক্তার শুধু টেনশন হয়। কোনো রোগীর দিনের শেষে রাতের বেলায় শুরু হয়। বিশেষ কোনো ঘটনা অনেকবার মনে পড়ে। আবার কেউ কোনো ঘটনা বলার জন্য স্বামীকে বারবার বিরক্ত করে, অথচ যা একবার বললেই হয়

অপর অংশটি হলো চিন্তাকে কাজ অথবা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা, যাকে কমপালশন বলে

মাথায় সারাক্ষণ টেনশন থাকে। কেউ বলে একটা টেনশন গেলে অন্যটা আসে। কিছুক্ষণের জন্য মাথা টেনশনমুক্ত হয় না

কেবল কল্পনা আসে

কোনো রোগীর তীব্র ইচ্ছা হয় অন্যকে আঘাত করা, গাড়ির নিচে ঝাঁপ দেওয়া, বিশেষ কোনো জায়গায় গেলে ভয় পায়। এটাকে অবসেশনাল ফোবিয়া বলে

কেউ কেউ একই ভঙ্গিতে গুনবে ও ঘরের কাপড়-চোপড় বারবার গুছিয়ে রাখবে। একটু এদিক-ওদিক হলে সবার সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়ে দেবে

এ রোগের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই রোগীর কষ্টকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করার আগে অনেক সময় পার হয়ে যায়। আবার চিহ্নিত হওয়ার পরও এর চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে থেকে যায় নানা বিভ্রান্তি।

 

ডা. দেলোয়ার হোসাইন

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০