Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 7:36 pm

শুধু ফুল নয়, ফলমূল শাকসবজি সবই হচ্ছে ছাদ বাগানে

আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান: পার্বত্য চট্টগ্রামেও জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদ বাগান। বান্দরবান জেলা সদরে বাড়ির ছাদে ছোট-বড় অসংখ্য ছাদ বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। ছাদে এখন শুধু ফুল নয়, শাকসবজি, ফলমূল সবই হচ্ছে। বাণিজ্যিক না হলেও শখের এই ছাদ বাগানে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলায় বাড়ছে ছাদ বাগানের সংখ্যা। দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদ কৃষি। জেলা শহর ছাড়াও বান্দরবানের সাত উপজেলায় ছাদ কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে ছোট-বড় শতাধিক বাগান গড়ে তোলা হয়েছে বাসাবাড়িতে।

শখের বসে বাড়ির ছাদে নিজস্ব প্রচেষ্টায় ফুল, সবজি এবং ফলমূলের বাগান গড়ে তুলছেন অনেকে। জেলা শহরের বাসাবাড়িতে এখন ছাদ বাগান শুধু সৌন্দর্যবর্ধন নয়, মানুষের রুচিশীলতাও ফুটিয়ে তুলছে। পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে শখের এই ছাদ বাগানগুলো। বাতাসে নাইট্রোজেন ছড়িয়ে পড়া দূষিত নগরে পূরণ করছে অক্সিজেনের চাহিদাও। ছাদ কৃষিতে শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক প্রশান্তি অনুভব করছেন বলে জানিয়েছেন শৌখিন বাগানিরা।

ছাদ বাগানি মাম্যাচিং মারমা বলেন, ছাদ বাগানে কৃষি আমার দৈনন্দিন শাকসবজির চাহিদা মেটায়। আমি অসুস্থ বয়োজ্যেষ্ঠ রোগী হওয়ায় অর্গানিক ফলমূল-শাকসবজি খেতে হয়। বাগানে উৎপাদিত কীটনাশক মুক্ত টাটকা শাকসবজিগুলো আমার সেই চাহিদাও অনেকাংশে পূরণ করে। সুস্থ থাকার জন্য ব্যয়াম দরকার, ছাদে ওঠানামা এবং বাগানে বসে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে গিয়ে আমার শারীরিক ব্যায়ামের কাজটাও হয়ে যায়। বাড়তি পরিশ্রমের দরকার হয় না। তাই ছাদ কৃষি আমার কাছে সুস্থতার প্রতিশোধকও বটে।

সবুজ গাছ-গাছালি পছন্দ করেন না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বান্দরবান জেলায় বাসার ছাদে গড়ে তোলা বাগানে উৎপাদিত হচ্ছেÑআম, কমলা, মাল্টা, সফেদা, ডালিম, অরবড়ই, আপেলকুল, জাম্বুরা, লেবু, রামবুটান, করমচা, আমড়াসহ বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি ফল। এছাড়া ছাদে লাগানো নানা প্রজাতির শাকসবজি পরিবারের দৈনন্দিন টাটকা সবজির চাহিদাও মেটাচ্ছে। শহরের সৌন্দর্যবর্ধনে ভূমিকা রাখছে রং-বেরঙের ফুল গাছগুলো। কীটনাশক মুক্ত বাগানে উৎপাদিত টাটকা ফলমূল এবং শাকসবজি ছেলে-মেয়েদের পুষ্টির চাহিদারও জোগান দিচ্ছে।

ছাদ বাগানি ফাতেমা বিনতে আলম বলেন, ছাদ কৃষিতে শুধু সৌন্দর্যবর্ধন নয়, বাগানে উৎপাদিত ফলমূল এবং শাকসবজিগুলো পরিবারের চাহিদাও মেটায়। প্রথমে ফুলের বাগান দিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তবে বর্তমানে আমার ছাদ বাগানে আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, করমচা, সফেদা, অরবড়ই ও আপেলকুল। কমলা, মাল্টা, আমড়া, লেবু, ডালিমসহ বিভিন্ন ধরনের ফল গাছ, দেশি-বিদেশি প্রায় ৫০ প্রজাতির অর্কিড, ক্যাকটাস, ফুলের গাছ এবং মৌসুমি শাকসবজির গাছ রয়েছে। পরিকল্পিত ছাদ বাগান গড়ে তুলতে আমার প্রায় সাত লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। তবে কম খরচেও দীর্ঘস্থায়ী টেকসই সিনথেটিক টব ও প্লাস্টিকের টবে গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান করা সম্ভব। বাগান থেকে কার্টিং করা গাছের চারা বিক্রি করেও আমার আয় হয়। আমার ছাদ বাগান দেখতে আসেন অনেকেই। বাগান দেখে ছাদ বাগানে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আশপাশের পরিচিত মানুষ। এটিও আমার কাছে বাড়তি পাওয়া এবং প্রশান্তি দেয়।

ছাদ বাগানি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, আমার ছাদ বাগানে সব বিদেশি জাতের ফল। আম, মাল্টা, আনার, ডালিম, কমলা, জাম্বুরা সবগুলোয় বিভিন্ন দেশের উন্নত জাত। বাগানে উৎপাদিত ফলমূলগুলো আমার পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বণ্টন করি। আশপাশের লোকজনদেরও বিতরণ করা হয়। বান্দরবান হর্টিকাল সেন্টারের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে ছাদ বাগানের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যান্য অঞ্চলের মতো বান্দরবান জেলায় ছাদ বাগান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। হর্টিকালচার সেন্টার এবং আশপাশের নার্সারিগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলজ এবং ফুলের চারা সংগ্রহ করে বাগান সৃজন করছেন। ছাদ বাগানে উৎপাদিত ফলমূল এবং শাকসবজি পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদাও মেটাচ্ছে। বর্তমানে ছাদ বাগান শখের বসে গড়ে তোলা হলেও এটির বাণিজ্যিক ভালো সম্ভাবনাও রয়েছে। সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত বাগান গড়ে তুলতে হবে।