Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:47 pm

শুরু ও বর্তমান

লক্ষ্মীপুরের আসবাবশিল্পে ভূমিকা রাখছে চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজ। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন জুনায়েদ আহম্মেদ

ফার্নিচার ব্যবসায় দীর্ঘ ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল খালেকের। বেকারত্ব ঘুচাতে চট্টগ্রাম বলির হাটে ১০ বছর ফার্নিচার দোকানে কাজ করেন, কাজ শেখেন। এরপর তিনি ১৯৮৩ সালে লক্ষ্মীপুর শহরের আজিম শাহ্ মার্কেটে তিন ভাই মিলে জনতা ফার্নিচার নামে দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
ব্যবসার প্রসার ঘটাতে তিনি নিজেই ২০০৩ সালে শহরের মাদাম জিরো পয়েন্টে চৌধুরী ভিলায় চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজ প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার্থে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তর করে লক্ষ্মীপুর আলিয়া মাদরাসার সামনে আনা হয়। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন কারিগর কাজ করেন। ব্যবসার শুরুতে তিনি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থেকে সেগুন কাঠের ফার্নিচার কিনতেন। কিন্তু গ্রাহক গুণগত মান নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকায় তিনি ঢাকার বাড্ডা, সেগুনবাগিচা থেকে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য কেনেন। এছাড়া চট্টগ্রামের বলির হাট ও বহদ্দারহাট এলাকা থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাব কেনেন।
চট্টগ্রামের ফার্নিচারের কাঠ ভালো থাকলেও ডিজাইন কিছুটা অস্পষ্ট। ঢাকা থেকে আমদানি করা পণ্যে কাঠের চেয়েও ডিজাইন নিখুঁত ও আকর্ষণীয়। এছাড়া ক্রেতার চাহিদা মেটাতে মালয়েশিয়ান উড ও ইতালিয়ান কালারের সামগ্রী ডেকো কোম্পানি থেকে আমদানি করে থাকেন।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজের বিপণন ও দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন তার মেজ ছেলে মো. সাকিবুল হাসান। আলাপ হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরে বর্তমানে চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজের পণ্য সবার পছন্দের শীর্ষে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কাঠের গুণগত মান রক্ষা করে অত্যন্ত নিপুণভাবে তৈরি হয় আসবাব। দেশি-বিদেশি আমদানি করা কাঠ দিয়ে তৈরি করা আসবাব দিয়ে গ্রাহকের চাহিদা মেটানো হয়। খাট, আলমারি, ডাইনিং টেবিল, সাইট টেবিলসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠের আসবাবপত্রের পাশাপাশি ক্রেতার চাহিদা অনুসারে ফোম, লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের আসবাব পাওয়া যায় এ প্রতিষ্ঠানে।

প্রতিষ্ঠানটির বৈশিষ্ট্য

জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তোফায়েল আহম্মদের সঙ্গে ঘরের আসবাব নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, অনেক বছর ধরেই ফার্নিচার কিনে আসছি। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও অফিসের সাজসজ্জার জন্য তিনি ফার্নিচার কিনে থাকেন। এ শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজের আসবাব সবচেয়ে নিখুঁত ও টেকসই।
অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য কামরুল হোসেন চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজের একজন গ্রাহক। তিনি জানান, বছর দশেক আগে শহরে বাড়ি নির্মাণের পর পুরোনো ফার্নিচার বিক্রি করে নতুন আসবাব কিনেছি। এ ফার্নিচার হাউজটির আসবাবের গুণগত মানে আমি সন্তুষ্ট।
ব্যবসাকে আরও অনেক বেশি সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয় চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজের পণ্য।
প্রতিশ্রুতিমূলক সেবার মাধ্যমে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা হয়।

অভিজাত ডিজাইনের সমারোহ

ঘর, অফিস, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান সবখানে আসবাবের নানা সাজসজ্জা এখন নিত্যনতুনভাবে প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে স্থানভেদে ব্যবহার করা আসবাবে আভিজাত্য ও সৌন্দর্যের প্রমাণ মেলে।
নিত্যনতুন ডিজাইন আর উপকরণ দিয়ে আসবাব তৈরি করা এখন শিল্পবোধেরও ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় কাঠের ওপর নানারকম শৈল্পিক কারুকাজ করে খাট-পালঙ্ক থেকে শুরু করে রাজকীয় সিংহাসন ও জনপ্রতিনিধিদের চেয়ার সাজানো
হতো। কিন্তু বর্তমানে আসবাব তৈরিতে কাঠের পাশাপাশি স্টিল, লোহা, প্লাস্টিক, পার্টিকেল বোর্ডসহ দেশি-বিদেশি আরও নানা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। আসবাবে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার চোখে পড়ে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ান প্রসেসিং উডের ব্যবহার নতুন সংযোজন।
প্রায় ৩৫ বছর আগে আসবাবশিল্প নিয়ে লক্ষ্মীপুরে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজ। লক্ষ্মীপুরের শীর্ষস্থানীয় আসবাবশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারণের পেছনে মূলমন্ত্র ছিল ‘চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকসেবা’। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত আসবাব তৈরি করছে। শুরু থেকেই নিখুঁত মানের নিশ্চয়তা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি কুড়িয়ে নিয়েছে এ অঞ্চলের ক্রেতাদের আস্থা।

পণ্য
নানা নকশা আর বিলাসী অর্ধশতাধিক পণ্য রয়েছে চট্টগ্রাম ফার্নিচার হাউজে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো

ডাইনিং টেবিল (মেলামাইন বোর্ড)
তিন হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত

ডাইনিং টেবিল (বার্মাটিক সেগুন)
৩৫ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত

শোকেস
২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত

ডিভান
১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত

সোফা (কাঠ)
২০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত

সোফা (গদি)
২৫ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত

খাট (বার্মাটিক সেগুন)
৪০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত

খাট (ইপিল ইপিল)
১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত

খাট (চট্টগ্রাম সেগুন)
২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত

খাট (মালয়েশিয়ান প্রসেসিং উড)
১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

আরও রয়েছে কাঠের তৈরি বিভিন্ন দামের আলনা, টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, কর্নার, জুতার বাক্স, মেট্রেস, বুকসেলফ প্রভৃতি।