নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে অন্যান্য বছরের মতো এবারও রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে ‘বৈশাখী মেলা ১৪২৫’। এবার মেলা অতিক্রম করবে ৩৯তম বছর।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমি চত্বরে আগামী ১ বৈশাখ ১৪২৫ (১৪ এপ্রিল ২০১৮) থেকে ১০ দিনব্যাপী এ মেলা শুরু হবে। মেলা আয়োজনের লক্ষ্যে বর্তমানে স্টল নির্মাণের কাজসহ অন্য সব প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রায় শেষ। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও এ মেলায় ঐতিহ্যবাহী বহুবিধ কুটির ও হস্তশিল্পজাত পণ্যের সমারোহ ঘটবে বলে মেলার আয়োজকরা জানান।
বৈশাখী মেলা ১০ বৈশাখ ১৪২৫ (২৩ এপ্রিল ২০১৮) পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উš§ুক্ত থাকবে।
বিসিকের বৈশাখী মেলা প্রথম শুরু হয় ১৩৮৫ বঙ্গাব্দে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান নিজ হাতে ঢোল বাজিয়ে এ মেলার শুভ সূচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ, ধানমন্ডি ক্লাব খেলার মাঠ এবং শেরেবাংলা নগর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে জায়গা বদল হলেও গ্রামীণ মেলার আদলে আয়োজিত বৈশাখী মেলার চালচিত্র বদলায়নি।
যেসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিসিক ঢাকায় বৈশাখী মেলাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করে আসছে, তা হলোÑ১. দেশের ক্ষুদ্র, কুটির ও হস্তশিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর বাজার সৃষ্টিতে সহায়তা প্রদান; ২. শহুরে ও বিদেশিদের সামনে গ্রামীণ পণ্যের পরিচিতি ঘটানো এবং ৩. নতুন নতুন নকশা ও নমুনার সঙ্গে কারুশিল্পীদের পরিচিত করা। এসব কারণে বৈশাখী মেলা ইতোমধ্যে রাজধানীবাসীর মাঝে অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষুদ্র, কুটির ও হস্তশিল্প খাতের উদ্যোক্তা এবং কারুশিল্পীদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন ও কেনাবেচার পাশাপাশি দেশের আবহমান গ্রামবাংলার সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। মেলায় কুটির, হস্ত ও কারুশিল্পীদের হাতে তৈরি বাঁশ ও বেতের পণ্য, মৃৎশিল্প, পাটপণ্য, নকশিকাঁথা, শতরঞ্জি, বাঁশের বাঁশি, কাঠজাত পণ্য, গৃহের সাজসজ্জার পণ্য, গহনা, রকমারি চুড়ি, পুঁতির মালা, ঝিনুকের পণ্য, জামদানি ও তাঁতের শাড়ি ইত্যাদি সামগ্রী ছাড়াও থাকবে নানারকম কদমা-বাতাসা ও মণ্ডা-মিঠাই। মেলায় এসব সামগ্রী নিয়ে প্রায় ২০০টি স্টলে পসরা সাজিয়ে বসবেন হস্ত ও কারুশিল্পীরা। তাছাড়া মেলায় ১০টি স্টলে বসে কারুশিল্পীরা তাদের নিপুণ হাতে নানারকম কুটির ও হস্তশিল্পজাত সামগ্রী তৈরি, প্রদর্শন ও বিক্রি করবেন।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে প্রধান অতিথি হিসেবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয় ও মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহম্মদ ইফতিখারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ সাংস্কৃতিক ও নৃত্যানুষ্ঠান। মেলা চলাকালে প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আমাদের গর্বের ধন লোকসংস্কৃতির নানা অনুষ্ঠান। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীতসহ অন্যান্য গান পরিবেশিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলা নববর্ষকে উৎসবে বরণ বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বর্ষবরণ উপলক্ষে মেলার আয়োজন এ উৎসবেরই অংশ। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের বিশেষ দিক হলো এর সর্বজনীন রূপ। বৈশাখী মেলা যেন সবার, সব মানুষের। মেলায় সবাই যেন এক ও অভিন্ন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, পেশা ও গোষ্ঠীর দেয়াল এখানে কাউকে আলাদা করতে পারে না। বিসিক ও বাংলা একাডেমির বৈশাখী মেলাও যেন বাঙালির চিরচেনা অসাম্প্রদায়িক চেতনারই বহিঃপ্রকাশ।
শুরু হচ্ছে বিসিক ও বাংলা একাডেমির বৈশাখী মেলা
