Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 10:51 pm

শুরু হলো সিনোফার্মের টিকাদান

নিজস্ব প্রতিবেদক: চীন সরকারের উপহার সিনোফার্মের টিকা দিয়ে দেশে আবারও শুরু হয়েছে টিকাদান কার্যক্রম। গতকাল শনিবার সকাল থেকে এ টিকাদান শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দিয়ে এ টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা জেলায় চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে দেয়া হবে সিনোফার্মের টিকা। এ চারটি হাসপাতাল হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে একটি করে টিকা কেন্দ্র হবে এবং প্রতি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে। তাছাড়া ঢাকা জেলা বাদে প্রতি জেলায় একটি করে টিকাকেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ থাকবে। তবে বুথ চালু করতে হবে টিকা গ্রহীতার সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। ১৫০ থেকে ২০০ জনের জন্য একটি বুথ চালু করা যাবে। দুইশর বেশি গ্রহীতা হলে দুটি বুথ চালু করতে হবে।

এছাড়া যে সব জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেই, সে সব জেলায় সিভিল সার্জন জেলা কভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে জেলা সদর হাসপাতাল অথবা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের যে কোনো একটিকে জেলা টিকাকেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা দেবেন এবং ওই কেন্দ্রে দুটি বুথ থাকবে। টিকা কেন্দ্র শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজের সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান নির্ধারণ করা হয়েছে চার সপ্তাহ বা ২৮ দিন। এছাড়া টিকাকেন্দ্রের অন্যান্য ব্যবস্থাপনা আগের মতোই প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যারা আগে নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা পাননি, তাদের টিকা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএস দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানাতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র পরিবর্তন করে টিকা নেয়ার সুযোগ থাকছে না।

এদিকে ১০ ক্যাটেগরির ব্যক্তিদের এ টিকা দেয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে টিকার জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে ইতোমধ্যে যারা টিকা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টিকা পাননি, তাদের এ টিকা দেয়া হবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা যারা আগে টিকা নেননি, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মী, যাদের বিএমইটি নিবন্ধন কিংবা কার্ড আছে, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস ও সরকারি আইএইচটির শিক্ষার্থীরা রয়েছে এ তালিকায়। আরও রয়েছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা, বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্পে (পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র) সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সারাদেশে কভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ওয়ার্ড/পৌরসভার কর্মী এবং বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরা পাবেন সিনোফার্মের এ টিকা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, আগে অন্য কোনো কভিড-১৯ টিকা নেয়া থাকলে এই টিকা দেয়া যাবে না। নিবন্ধন ছাড়া কেউ টিকা নিতে পারবেন না। তাছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে বাংলাদেশে এলে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে এ টিকা দেয়া যাবে না। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস এবং সরকারি আইএইচটি শিক্ষার্থীরা জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে স্টুডেন্ট আইডির তথ্য লিপিবদ্ধ করে টিকা নিতে পারবেন, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়ার আগে জাতীয় পরিচয়পত্র সুরক্ষায় ওয়েব পোর্টালে/অ্যাপে নিবন্ধন করে নিতে হবে।

এদিকে সিনোফার্মের এ টিকা ১৮ বছরের নিচের কাউকে দেয়া হবে না। টিকা দেয়ার সময় জ্বর থাকলে বা অসুস্থ থাকলে, টিকাজনিত অ্যালার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকলে, প্রথম ডোজ নেয়ার পর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তিনি এ টিকা নিতে পারবেন না। অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হƒদরোগ, স্ট্রোক, ঘা, অ্যাজমা, কিডনি রোগ, ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ক্যানসারে আক্রান্ত এবং স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠীর টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, ১৯ জুন থেকে আবারও টিকার কার্যক্রম শুরু হবে। ঢাকায় যেসব মেডিকেল ইনস্টিটিউট-কলেজ আছে সেখানে আমরা আবার প্রথম ডোজের টিকা দেয়া শুরু করব। সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা দিয়ে এ কার্যক্রম চলবে। টিকা সরবরাহ অব্যাহত থাকলে কার্যক্রম চলতে থাকবে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ জেলায় সিনোফার্মের টিকা পৌঁছে গেছে বলেও জানান তিনি।

১৯ জুন থেকে টিকা দেয়া হবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশকে মোট ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা উপহার দিয়েছে চীন। এর মধ্যে ৩০ হাজার ডোজ এ দেশে কর্মরত নিজেদের কর্মীদের জন্য নেয় চীন। বাকি ১০ লাখ ৭০ হাজার ডোজ টিকা দেশের পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে দেয়া যাবে। উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন বিমানবাহিনীর দুটি উড়োজাহাজে করে চীনের উপহারের ছয় লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা আনা হয়। এর আগে মে মাসেও সিনোফার্মের পাঁচ লাখ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দিয়েছিল চীন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কভিড-১৯ প্রতিরোধে চীনের পক্ষ থেকে টিকা সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।