শুল্ক কমাতে নভেম্বরে আমদানিকারকদের ৮২ মামলা

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: শুল্ক ফাঁকি, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি, ভুল এইচএস কোড, বিভিন্ন অনিয়মের জন্য কাস্টম কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকদের পণ্য আটক, মামলা ও এইচএস কোড অনুযায়ী শুল্কায়ন করে থাকে। এসব মামলা ও শুল্ক কমাতে কমিশনার দফতরে আপিল করেন আমদানিকারকরা। শুল্কায়ন কমাতে বিভিন্ন বিভাগে গত নভেম্বর মাসে এমন মামলা হয়েছে ৮২টি। এতে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ পাঁচ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে এ মাসে মোট মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮টি। এছাড়া ১৯৯০ থেকে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি এমন মামলার সংখ্যা ৯ হাজার ৩০২টি। তাতে জড়িত রাজস্ব রয়েছে এক হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস আইন শাখার তথ্যমতে, নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার (আপিল) দফতরে শুল্কায়ন কমতে আপিল জমা পড়ে ২৩টি। এতে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ দুই কোটি দুই লাখ টাকা। এছাড়া কমিশনার (আপিল) দফতরে কোনো কারণে মামলা নিষ্পত্তি না হলে সেই মামলা আপিলাত ট্রাইব্যুনালে গড়ায়। আপিলাত ট্রাইব্যুনালে নভেম্বর মাসে মামলা হয় ৫৪টি। এখানে জড়িত রাজস্ব দুই দশমিক শূন্য আট কোটি টাকা। সাধারণত কমিশনারের (আপিল) দফতর ও আপিলাত ট্রাইব্যুনালে বেশিরভাগ মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে খুব কমসংখ্যক মামলা স্থানান্তর হয়। তবে এ দুই বিভাগে মামলা স্থানান্তরিত হলে মামলা বছরের পর বছর চলতে থাকে। এ দুই বিভাগে নভেম্বর মাসে মামলা হয় পাঁচটি। হাইকোর্ট বিভাগে তিনটি ও আপিল বিভাগে দুটি। তাতে রাজস্বের পরিমাণ প্রায় ৮৩ লাখ টাকা।

আইন শাখার তথ্যমতে জানা যায়, চলতি বছরের বিভিন্ন মাস মিলে কমিশনারের আপিল দফতরে নিষ্পত্তি হয়নি এমন মামলার সংখ্যা ২৩৮টি। এতে জড়িত রাজস্ব রয়েছে ২৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। পাশাপাশি আপিলাত ট্রাইব্যুনালে অনিষ্পত্তিত মামলার সংখ্যা এক হাজার ৯৭৪টি। তাতে রাজস্ব জড়িত আছে ২৭৯ কোটি টাকা। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নিষ্পতি হয়নি হাইকোর্ট বিভাগে চলমান মামলা আছে ছয় হাজার ৮২৭টি। এখানে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ৯৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সর্বশেষ ধাপ আপিল বিভাগে মামলা চলমান আছে ২৬৩টি, এখানে রাজস্ব জড়িত ৫০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের মামলাগুলো ১৯৯০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

এসব মামলার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা বা তার অধিক রাজস্ব জড়িত এ রকম মামলার সংখ্যা হাইকোর্ট বিভাগে দুটি এবং আপিল বিভাগে একটি রয়েছে। এ তিনটি মামলার সঙ্গে প্রায় ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব জড়িত। এছাড়া তিন কোটির অধিক রাজস্ব জড়িত এমন মামলা রয়েছে তিনটি হাইকোর্ট বিভাগে। আর এক কোটির অধিক রাজস্ব জড়িত এমন মামলা রয়েছে হাইকোর্ট বিভাগে ১৩০টি। এতে রাজস্ব জড়িত আছে ৩২৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

আইন শাখার তথ্যমতে, নভেম্বর মাসে কমিশনার দফতর থেকে আপিল বিভাগ পর্যন্ত মোট মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮টি। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট নিষ্পত্তি হয়েছে ৭৭১টি। এর মধ্যে কমিশনার আপিল দফতরে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২৭টি। আপিলাত ট্রাইবুন্যালে ১৮২টি এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৬২টি।

অন্যদিকে গত মাস পর্যন্ত এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আবেদন পড়েছে ৮৬টি। তাতে রাজস্ব জড়িত রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। একই সময় পর্যন্ত এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭৭টি আবেদন। এছাড়া এডিআরের মধ্যেমে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৯টি আবেদন।

আইন শাখা সূত্রে আরও জানা যায়, কমিশনারের আপিল দফতর ও আপিলাত ট্রাইব্যুনালে মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেলে জড়িত রাজস্ব বা অতিরিক্ত রাজস্ব আমদানিকারকরা ফেরত পায়। অন্যদিকে হাইকোর্ট ও হাইকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল নিষ্পত্তির টাকা কাস্টমস পেয়ে থাকে। তবে আমদানিকারকের পক্ষে রায় গেলে অতিরিক্ত টাকা কাস্টমস থেকে আমদানিকারককে ফেরত দিতে হয়।

কাস্টম আইন শাখার কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, আমদানিকারকদের ভুল এইসএস কোড অথবা যদি মনে করে কোনো পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে তারা কমিশনারের (আপিল) দফতরে আপিল করে থাকে। কমিশনারের আপিল দফতরে সমাধান না হলে সেটাকে আপিলাত ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এরপর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল তিন-চার মাস পর মূল নথি তলব করে। এর মধ্যে রায় যদি আমদানিকারকের পক্ষে যায় তাহলে অতিরিক্ত পরিশোধিত শুল্ক কাস্টম থেকে নিয়ে যায় তারা। আর রায় যাদি কাস্টমসের পক্ষে আসে তাহলে বরাবর থেকে যায়।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০