শুল্ক পরিশোধে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের গড়িমসি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বেসরকারি রিজেন্ট এয়ার ওয়েজের কাছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে চার কোটি ২৯ লাখ টাকা আবগারি শুল্ক বকেয়া পাওনা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। অথচ উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো টিকিট কাটার সময় যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে আবগারি শুল্ক বা এক্সাইজ ডিউটি কেটে রাখে। এ অর্থ পরবর্তী মাসের ২০ তারিখের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু রিজেন্ট এয়ারলাইনস কখনোই তা ঠিকমতো জমা দেয়নি বলে জানা গেছে। এ কারণে এর আগে প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
সম্প্রতি এনবিআরের এক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নতুন করে এ প্রতিষ্ঠানটির কাছে বকেয়া আবগারি শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় চার কোটি ২৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা। যা গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কৃত টিকিটের বিপরীতে আদায়যোগী। এর আগেও ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়কালে রিজেন্ট এয়ার ঠিকমতো রাজস্ব পরিশোধ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকেই রিজেন্ট এয়ারকে (এইচজি এভিয়েশন) তাগাদাপত্র ইস্যু করে আসসে এনবিআর। পরবর্তীতে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধসহ পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হলে রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ আপিলাত ট্রাইব্যুনালে যায়।
এ বিষয়ে জানতে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান হাবিবের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। ফলে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, অভ্যন্তরীণ ও সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিভিন্ন রুটে উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা এবং সার্কের বাইরে এশিয়ার অন্য দেশগুলোর জন্য দুই হাজার টাকা আবগারি শুল্ক ধার্য রয়েছে। আর ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে উড়োজাহাজে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এ শুল্কবাবদ যাত্রীদের পরিশোধ করতে হয় তিন হাজার টাকা। যা টিকিট ক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে নগদে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো। কিন্তু কোনো কোনো উড়োজাহাজ সংস্থা এ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক কাজে বিনিয়োগ করে।
এ প্রসঙ্গে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শফিউজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তারা আবগারি শুল্কের অর্থ পরিশোধ করছে না। এ অর্থ তারা যাত্রীদের কাছ থেকে তারা ঠিকই নিচ্ছে। কিন্তু এনবিআরে জমা দিচ্ছে না। আর এটা এমন নয় যে ব্যবসা করে তারপর টাকা দিতে হবে। এটা তো যাত্রীরা নগদে দিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আবগারি শুল্কের অর্থ পরিশোধে প্রতিষ্ঠানকে বেশ কয়েকবার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ বকেয়া রাজস্ব পরিশোধে গড়িমসি করছে। তারা যদি এনবিআরের কোনো বিষয়ে সাড়া না দেয়, তাহলে আইনানুযায়ী শেষ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত ফ্লাইট জব্দ করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা আমরা এখনও পর্যন্ত করিনি এতে তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হবে।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, যশোর, সৈয়দপুরের অভ্যন্তরীণ রুট হিসেবে যাত্রী পরিবহন করে। আর কুয়ালালামপুর, দোহা, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কলকাতা, কাঠমান্ডু, দাম্মাম এবং মাসকাট ইত্যাদি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
জানা যায়, বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ চট্টগ্রামভিত্তিক হাবিব গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বরে কোম্পানিটি প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০