শূন্য সহনশীলনতায় অর্থ পাচার বন্ধ করুন

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পদত্যাগ করা সদ্য সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের থেকে ঘুষের মাধ্যমে অনিয়মে সহায়তা করেছেন। গত বছরগুলোয় হলমার্ক ও বিসমিল্লাহসহ ২৪টি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৯২ হাজার কোটি টাকার মুদ্রা পাচারে অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেছিল বিএফআইইউ। অভিযোগ রয়েছে, ক্যাশ ট্রানজেকশন রিপোর্ট (সিটিআর) বিএফআইইউর পক্ষ থেকে যাচাই করা হয়নি, যার পেছনের খলনায়ক ছিলেন মাসুদ বিশ্বাস। এমন অনিয়মসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অর্থ পাচার ঠেকানোর দায়িত্ব বিএফআইইউর। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তা ঠেকাতে তো পারেনি, উল্টো অর্থ পাচারে সহায়তা বিএফআইইউর বিরুদ্ধে। এছাড়াও ব্যাংকগুলোকে চাপ দিয়ে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ইভেন্ট আয়োজন ও বিদেশ সফরের মাধ্যমে অর্থ অপব্যয় করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে দেখা যায়, চট্টগ্রামভিত্তিক একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ও নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে জেনেও পাচার ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বিএফআইইউ। বেড়ায় ক্ষেত খাওয়ার এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর কী হতে পারে! এটি ঠিক সন্দেহভাজন লেনদেন ও অর্থ পাচার বন্ধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি। কিন্তু সবটাই রাজনৈতিক অঙ্গীকাবের ওপর চাপিয়ে দেয়া বোধকরি সঙ্গত হবে না। পাচার ঠেকাতে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান প্রধানকেও ন্যূনতম সৎ ও নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হয়! রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থলের বিড়াল বের হতে শুরু করেছে।

বিএফআইইউ অর্থ পাচার রোধে দেশের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ক ইউনিট হিসেবে কাজ করে। এখন মনে হয় খোদ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমই সন্দেহজনক। কোনো ছোট গ্রাহকের হিসাবে বড় লেনদেন, কোনো গ্রাহকের একসঙ্গে বড় অঙ্কের নগদ অর্থ উত্তোলন, ছোট ব্যবসায়ীর নামে বড় ঋণ, অপরিচিত হিসাবে টাকা স্থানান্তর, সম্পর্ক নেই এমন হিসাবে লেনদেনÑএমন বিষয়কে সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে চিহ্নিত। বিএফআইইউর সাবেক প্রধান কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে আখের গুছিয়েছেন।

আর্থিকসহ সব ধরনের অপরাধ লুকানো, কর ফাঁকি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার আইন ও বিনিয়োগ নীতি লঙ্ঘন, অন্য দেশে নিরাপদ বিনিয়োগ এবং উন্নত দেশের উঁচু মানের জীবনযাত্রার লোভে সেখানকার নাগরিকত্ব লাভÑ প্রভৃতি উদ্দেশ্যে অর্থ পাচার হয়ে থাকে। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থই সাধারণত বিদেশে পাচার করা হয়। বিদেশে অর্থ পাচার রোধ করতে হলে দুর্নীতির লাগামটি টেনে ধরতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিটি আর্থিক লেনদেনে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। পাচারের ক্ষেত্রে জনমনে ধারণা আছে যে, সরকার চুনোপুঁটিদের পাকড়াও করে; রুই-কাতলাদের ছাড় দেয়। এ বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে বিএফআইইউ’র সাবেক প্রধানের কাছে। সরকার শূন্য সহনশীলনতায় অর্থ পাচার বন্ধে কঠোর হবে বলেই প্রতাশা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০