Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 12:18 pm

শেখ হাসিনার চীন সফরে দুই দেশের সম্পর্কের বিশেষ উত্তরণ হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন বেইজিং সফরে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কের বিশেষ উত্তরণ ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান লিউ জিয়ানছাও।

রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে লিউ জিয়ানছাও এ মন্তব্য করেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় চীনের দূতাবাস আয়োজিত ‘চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে: সিপিসি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা’ শীর্ষক ওই সেমিনারে সঞ্চালনা করেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

সেমিনারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ১৪-দলীয় জোটের শরিক বিভিন্ন দলের নেতা, ব্যবসায়ী নেতা, সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আলোচনায় অংশ নেন।

লি জিয়ানছা বলেন, ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের সম্পর্কের গুণগত উত্তরণ ঘটেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন বেইজিং সফরের মাধ্যমে আবার দুই দেশের সম্পর্কের ব্যতিক্রমী উত্তরণ ঘটবে।

লি জিয়ানছাও বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরের অপেক্ষায় আছি।’ তিনি বলেন, এটি হবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার পঞ্চম চীন সফর। প্রতিবারই তিনি (শেখ হাসিনা) চীন সফরের সময় প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন।

গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সিপিসির মন্ত্রী জানান, তারা অঞ্চল ও পথের উদ্যোগের (বিআরআই) উচ্চ মানসম্পন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম বিআরআইয়ের সমঝোতা স্মারক সই করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিআরআই কাঠামোর আওতায় পদ্মা সেতু রেলসংযোগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, দাশেরকান্দি পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পসহ ১৪টি অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে ও হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো দুই দেশের সহযোগিতার ভিত্তি শক্তিশালী করেছে।

লিউ জিয়ানছাও বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের পর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন ধাপে পৌঁছেছে। চীন সব সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিকল্প সহযোগী হিসেবে যুক্ত থাকার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।

গত বছর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত সিপিসির সম্মেলনের প্রসঙ্গে টেনে লিউ জিয়ানছাও বলেন, বাংলাদেশসহ সব বন্ধুদেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তিনটি আদর্শ মেনে চলা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। লি জিয়ানছাও বলেন, প্রথমত, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে কখনও কোনো আদর্শকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। এর ফলে বিশ্বের নানা প্রান্তে চীনের বন্ধু রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতায় রয়েছে, এমন বিবেচনায় কিন্তু কোনো দেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকে বিবেচনায় নেয়া হয় না। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতপার্থক্য দূর করার সময় একে অন্যের মতের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অভিন্ন ক্ষেত্র বেছে নেয়া হয়।

সেমিনারে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, চীনের আধা দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল কিছু কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব অতীতে দেয়া হয়েছিল। দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চীন তা বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। বাংলাদেশকে নানাভাবে সহযোগিতায় যুক্ত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারকে রাজি করানোর বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ এই সংকট বাংলাদেশের ঘাড়ে বিরাট বোঝা হয়ে চেপে বসেছে।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ হয়েছে। দলীয় পরিমণ্ডলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগিতা বাড়ছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যাদের সঙ্গে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের তরুণ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে এসেছে। সামনেও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলের চীন সফরের কথা রয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প নিয়ে চীনের কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। সেমিনারে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ১০টি স্কুলের সঙ্গে চীনের ১০টি স্কুলকে যুক্ত করে পরীক্ষামূলক (পাইলট) প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। আর স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার জন্য ১০টি সমন্বিত স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ধরনের পরীক্ষামূলক প্রকল্প নেয়া যায়। তবে বাংলাদেশের যেসব স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানকে এই প্রকল্পে যুক্ত করা হবে, তা যেন শুধু ঢাকায় সীমিত না হয়।

আলোচনায় আরও অংশ নেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিএনপির নেতা এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি শমী কায়সার, ইউএনবির প্রধান সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ খান, সাবেক কূটনীতিক সাব্বির আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।