শেখ হাসিনা আমিরাতে গেছেন কি না নিশ্চিত নন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি থেকে আরব আমিরাতে যাওয়ার যে খবর বেরিয়েছে, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত আমরা হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতেও খোঁজ করেছি, আমিরাতেও খোঁজ করেছি, কনফার্মেশন অফিসিয়ালি কেউ দিতে পারেনি। তবে আপনারা যেমন দেখেছেন, আমরাও দেখেছি যে, উনি আজমানে সম্ভবত গেছেন। কিন্তু এটা রিকনফার্ম করার চেষ্টা করেও আমরা সফল হইনি।’

কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের প্রবল গণ-আন্দোলন ও জনরোষের মুখে ৫ আগস্ট গণভবন থেকে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। খবরে বলা হয়, গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে বিমানবন্দরে, সেখান থেকে বিমানবাহিনীর একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজে আগরতলা হয়ে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে নামেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।
সম্প্রতি খবরে বেরিয়েছে, শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে আরব আমিরাতের আজমান শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হয়েছেÑআমেরিকার চাপে ভারত সরকার তাকে দিল্লি থেকে আমিরাতে পাঠিয়েছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, “এটা আমি বলতে পারব না, আমেরিকাকে জিজ্ঞেস করেনÑ‘ওরা চাপ দিয়েছে কি না’।” ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে অনেকে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন, এমন খবর প্রকাশ পেয়েছে। এই অনুমোদনের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান কীÑপ্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মিশন ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে পারে শুধু দেশে ফেরার জন্য, অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য না।’ কেউ যদি বাংলাদেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস চায়, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, ট্রাভেল পাসের জন্য পাসপোর্ট লাগে। পলাতকদের জন্য ‘স্বাভাবিকভাবে’ পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে না।

‘তারা যদি দেশে ফিরতে চায়, তাদের অবশ্যই ট্রাভেল পাস ইস্যু করা যেতে পারে থিওরিটিক্যালি, যাতে তারা দেশে ফিরে আসতে পারে, ফর ওয়ান ওয়ে, ট্রাভেল টু বাংলাদেশ।’
দেশ থেকে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে চাওয়া হবে কি নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সেটা যদি প্রয়োজন মনে করা হয় যেÑতালিকা দরকার, তাহলে চাওয়া যেতে পারে।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন করা হয়, কয়েকজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকে ভারতে ঘুরতে দেখা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে যেহেতু মামলা হয়েছে, তাদের ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কি না।

উত্তরে তিনি বলেন, ‘তারা সেখানে ঘুরছে সেটি আপনারা পত্রপত্রিকায় দেখেছেন, আমিও ততটুকুই দেখেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি জানি না। যেহেতু মামলা হচ্ছে বা হয়েছে; কোর্ট থেকে যদি বলেÑতাদের হাজির করতে হবে, অবশ্যই আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’ বাংলাদেশি ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ উল্টো করে ঝুলানো হবে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের বিষয়ে ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এক বক্তৃতায় ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ কারণে ঝাড়খণ্ডের ভোটের সংখ্যায় পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন।

মোদিকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলা লিখেছে, তিনি বলেছেন যেÑসেখানে ‘আদিবাসী জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে, অন্যদিকে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা সমানে বেড়ে চলেছে।’ ‘জনবিন্যাসে বিপুল পরিবর্তন হচ্ছে, আদিবাসী আর হিন্দুদের সংখ্যা কমেছে। আপনাদের কাছে জানতে চাই ঝাড়খণ্ডে এই পরিবর্তন আপনাদের চোখে পড়ছে কি পড়ছে না? বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বাড়ছে কি বাড়ছে না?’

অমিত শাহর ধারাবাহিকতায় মোদির এমন বক্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবাদ জানাবে কি নাÑএমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার মনে হয় যে, আমরা এ ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ দিয়েছি, সেটাই আপাতত যথেষ্ট। দেখা যাক, পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়। তাদের তো সামনে নির্বাচন-টির্বাচন আছে, এগুলো নিয়ে তারা এমন কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। যাই হোক, আমরা চেষ্টা করব যে, যেন এই জিনিসগুলো যথাসম্ভব কম বলা হয় বা না বলা হয়Ñভারত সরকারের পক্ষ থেকে; আমরা সেই চেষ্টা করব।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০