রফিক মজিদ, শেরপুর: ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা গারো পাহাড়ের জেলা শেরপুর। জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোমড়া। গ্রামটিতে বসবাসকারী সবাই বিভিন্ন সবজির আবাদ করেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো কাঁকরোল চাষ। তাই গোমড়া গ্রামটি এখন কাঁকরোল গ্রাম নামেই পরিচিতি ছড়িয়েছে।
জানা গেছে, শেরপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলার একটি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ২০০ কৃষক কাঁকরোল চাষের ওপর নির্ভরশীল। গ্রামটি বর্তমানে গোমড়া বা কাঁকরোল গ্রাম হিসেবেই পরিচিতি ছড়িয়েছে। এখানকার কাঁকরোল জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর এভাবেই চাষকৃত কাঁকরোল বিক্রি করে নিজেদের সংসারের চাকা সচল রাখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, কাঁকরোলের বীজ কাঁকরোল গাছের নিচে হয়ে থাকে; যা দেখতে মিষ্টি আলুর মতো। মার্চ ও এপ্রিলে এই সবজির চাষ করা হয়। চারা গজানোর ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া সম্ভব। কাঁকরোল লতানো জাতীয় গাছ। স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছে হয় না। তাই বাগানে দুই ধরনের গাছ না থাকলে পরাগায়ন ও ফলন কম হয়। কাঁকরোল চাষে বিঘাতে খরচ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার। কৃষকরা বলছেন, যদি ফলন ও দাম ভালো হয় তবে প্রতি বিঘায় খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকার ওপরে লাভ থাকে। এ বছর ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে কাঁকরোলের চাষ হয়েছে।
কাঁকরোল অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজিÑএতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, ক্যারোটিন, আমিষ, ভিটামিন এ, বি ও সি এবং খনিজ পদার্থ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। কাঁকরোলে ভিটামিন সি থাকায় শরীরের টক্সিন দূর করে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। কাঁকরোলে আছে বিটা ক্যারোটিন ও আলফা ক্যারোটিন; যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, ত্বককে করে উজ্জ্বল। এছাড়া কাঁকরোলের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
একটা সময় এই এলাকায় বহু জমি পতিত থাকত। কিন্তু ধীরে ধীরে তা চাষাবাদের আওতায় আসতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে এ গ্রামের প্রায় সব মানুষই নিজের কিংবা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কাঁকরোল চাষ শুরু করে। এখানকার কাঁকরোল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
এদিকে কাঁকরোল চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার।