রফিক মজিদ, শেরপুর : শেরপুরে সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রচুর বালিমাটি চলে আসায় গারো পাহাড় সীমান্তের ঝিনাইগাতি উপজেলার মহারশি নদী-তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ২৫ গ্রামে শত শত একর জমিতে বালির স্তর পড়ে গেছে। ফলে ওইসব জমি এখন অনাবাদি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন গ্রামে আমন আবাদের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করলেও জমি পতিত হয়ে পড়ে থাকায় ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত জমির কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। এ অবস্থায় তারা বালির স্তর কাটতে সরকারি সহায়তা চান। আশ্চর্য হলেও সত্য, বালির স্তরের বিষয়ে ঝিনাইগাতি কৃষি বিভাগ কিছুই জানে না। সংবাদকর্মীর তথ্য নেয়ার সময় তারা এ বিষয়ে জেনে নড়েচড়ে বসেন এবং দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত জমির তাৎক্ষণিক জড়িপ করেন।
জানা গেছে, শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবর্দী উপজেলায় পাহাড়ি নদী মহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালি নদী দিয়ে গত জুলাই মাসে দুই দফা উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢলের পানি নেমে যাওয়ায় উল্লেখিত উপজেলার মধ্যে বিশেষ করে ঝিনাইগাতী উপজেলার ঝিনাইগাতী সদর, হাতিবান্দা ও মালিঝিকান্দাসহ তিন ইউনিয়নের প্রায় ২৫ গ্রামে শত শত একর জমিতে বালির স্তর পড়ে চাষাবাদে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ওই জমিতে কোনো রকমের ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। ফলে অনাবাদি হয়ে থাকা জমির কৃষকরা হাতাশ হয়ে পড়েছেন। তবে কোনো কোনো কৃষক নিজেই কোদাল দিয়ে বালি কেটে ফসল ফলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে ওই বালির মধ্যেই চারা রোপণ করেছেন। তাদের আশা সামান্য কিছু ফলন হলেও মন্দ কী?
ঘাঘড়া মোল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল হাশেমসহ অনেক কৃষক জানান, পাহাড়ি মহারশি নদীতে প্রতি বছরই ঢল নেমে নদীর বাঁধ ভেঙে গেলেও সেই বাঁধ সংস্কার না করায় প্রতি বছর ঢলের পানি প্রবাহিত হয়। সেই পানির সঙ্গে পাহাড়ি বালি এসে জমির ওপর মোটা স্তর পড়ে যায়। ফলে সেখানে আর ফসল ফলানো সম্ভব হয় না। তাই তারা দাবি করেছেন, উল্লেখিত নদীর ভাঙা বাঁধ শক্ত করে পুনর্নির্মাণ করলে ওই বালির স্তর থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুরিহারা, দারিয়ারপাড়, বেল তৈল, খিলগাঁও, দরিকালিনগর, লংগেশ্বর, রামনগর, দিঘিরপাড়, হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ঘাঘড়া মোল্লাপাড়া, কামারপাড়া, গাতিবান্ধা সরকার পাড়া, মাছপাড়া, প্রধানপাড়া, মেল্লাপাড়া, মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের হাঁসলিগাঁও, বাইতাগাঁও, রাঙামাটি, বরুডুবিসহ প্রায় দুটি গ্রামের শতাধিক ফসলি জমিতে বালির স্তর পড়ে অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। অথচ এসব জমিতে প্রতি বছর বোরো-আমনসহ বিভন্ন সবজি বাগান করা হতো। কিন্তু ওইসব জমির কৃষকদের এবার মাথায় হাত। তারা তাদের সংসার চালানো নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা জানান, বালির স্তর পড়ে জমির ক্ষতি হলেও কৃষি বিভাগ আমাদের কোনো পরামর্শ বা কোনো খোঁজখবর নেয়নি। তাদের জমির বালি সরাতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন কৃষকরা।
এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানায়। পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জরিপ চালান। তবে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে আপাতত ভুট্টা, বাদামসহ অন্যান্য যেসব ফসল করা যাবে, সে বিষয়ে কৃষকদের অবগত করেছি। তবে কী পরিমাণের জমিতে বালির স্তর পড়েছে সে হিসাব করা হয়নি। তবে বিষয়টা উপজেলা কার্যালয়ে অবগত করেছি।
এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার জানান, উপজেলার তিন ইউনিয়নে প্রায় ৬০ একর জমিতে বালির স্তর পড়েছে। বালির স্তর পরা জমিতে আপাতত ধানের আবাদ করতে না পারায় কৃষকরা সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ওই জমিতে ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল ফলাতে পারবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়ে ওপরে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানালে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।