শেরপুরে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

রফিক মজিদ, শেরপুর : কৃষিকাজে উচ্চ মূল্যে কৃষিশ্রমিক-নির্ভরতা কমাতে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। সম্প্রতি সারাদেশে সরকার কৃষিতে নানা প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি স্বল্প খরচে এবং কম সময়ে ধান কাটতে হারভেস্টার মেশিন চালু করেছে। ফলে দিন দিন এ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে কৃষকরাও। কৃষিপণ্য ফলাতে কম খরচ ও সময় বাঁচাতে কৃষকদের মধ্যেও বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগও এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের নানা ভর্তুকিসহ সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। 

জানা গেছে, এক সময় ধান কাটার মওসুম শুরু হলে কৃষকরা উচ্চ মূল্যে শ্রমিক নিয়োগে হিমশিম খেত। হন্যে হয়ে ছুটতে হতো শ্রমিকের পেছনে। ধানের দামের চেয়ে বেশি দামে শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করতে হতো কৃষকদের। এতে হতাশায় ভুগত কৃষকরা। সম্প্রতি সরকার ভর্র্তুকি মূল্যে কৃষকদের মাঝে কম খরচে এবং অল্প সময়ে ধান কাটতে হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। এ হারভেস্টার মেশিনে এক একর জমির ধান কাটতে সময় ব্যয় হচ্ছে মাত্র এক ঘণ্টা। সেই সঙ্গে খরচ হচ্ছে মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। যা শ্রমিকদের দিয়ে কাটলে খরচ পড়ত ২০ হাজার টাকা। শুধু তা-ই নয়, শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে বাড়িতে এনে তা মাড়াই, শুকানো, খড় শুকাতে বাড়তি শ্রমিকের খরচ হতো এবং সময়ও ব্যয় হতো অনেক। কিন্তু বর্তমানে সে খরচ অনেক কমে যাওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে আগের চেয়ে অধিক লাভের মুখ দেখছে।

হারভেস্টার ব্যবহারকারী সদর উপজেলার গাজিরখামার ইউনিয়নের শালচূড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক রেনী জানায়, হারভেস্টার শুধু সাশ্রয়ীই নয়, আমাদের অনেক সময়ও বাঁচায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে মাঠে পাকা ধান রেখে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না। এ মেশিন আসায় আমরা দ্রুত ধান কেটে মাড়াই করে দিনে দিনেই ফসল ঘরে তুলতে পারি। এছাড়া আমাদের কৃষি কাজে ব্যবহƒত অন্যান্য নতুন প্রযুক্তির যন্ত্রাংশও কৃষিতে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা দেখে গ্রামের অন্যান্য কৃষকও বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এ হারভেস্টার ছাড়া আর ধান কাটবে না। কারণ, শ্রমিকের চড়া মূল্যে ধান কাটতে তাদের খুব বেশি লাভ হতো না। এখন লাভ হচ্ছে এবং মাড়াই খরচসহ অন্যান্য খরচও অনেক কমে যাচ্ছে। বাড়ির মহিলা ও শ্রমিকরাও এ হারভেস্টারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তাদের পরিশ্রমও অনেক কমে গেছে বলে জানান তারা।

গত ৯ মে শালচূড়া গ্রামে কম্বাউন্ড হারভেস্টার মেশিনে চলতি বোরো ধান কর্তন উদ্বোধনকালে শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার জানায়, সরকার সনাতনি পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান কাটতে এ হারভেস্টার মেশিনের জন্য নানা ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস জানায়, আমাদের দেশে ধান যখন পাকে তখন প্রতি বছর শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। এ শ্রমিক সংকট কাটাতে এবং কৃষকের লাভের মুখ দেখাতে এ হারভেস্টার মেশিন চালু করা হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকেও বাঁচাতে এ হারবেস্টার মেশিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জেলায় এবার প্রায় ৯১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ১০৬টি হারভেস্টার মেশিন চলমান রয়েছে এবং আগামীতো আরও বাড়ানো হবে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০