দেড় মাস ধরে বিক্ষিপ্তভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বন্যার কবলে পড়ছে। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ১১টি জেলা। সে বন্যায় প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়। এরপর উত্তরবঙ্গে তিস্তা অববাহিকার কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দেয়। এসব বন্যার ক্ষত কাটতে না কাটতেই নতুন করে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে শেরপুর জেলা। এবারের বন্যার ভয়াবহতা এতটাই তীব্র যে, এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা তাদের জীবদ্দশায় এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেননি। তবে পূর্বাঞ্চলের বন্যার সময় ত্রাণ তৎপরতায় যেমন বড় উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল, শেরপুরের ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শেরপুরে ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানো আবশ্যক বৈকি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বন্যাকবলিত এলাকার অনেকেই ঘরের আসবাবপত্র ও হাঁস-মুরগিসহ গবাদিপশু রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইছেন না, যার কারণে বন্যায় হতাহতের শঙ্কা আরও বাড়ছে। নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। আক্রান্ত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হয়েছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা।
বন্যা বাংলাদেশের একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছরই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে বন্যা হয়। তবে এবারের বন্যার প্রকৃতি একদম ভিন্ন। বিশেষ করে এবার এমন কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে, যেখানে সাধারণত বন্যা হয় না। ফলে ওইসব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বন্যার বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি ছিল না। এতে করে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। কাজেই বন্যা মোকাবিলায় দেশের সার্বিক প্রস্তুতি আরও জোরদার করা আবশ্যক।
বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ। ভারত ও চীনের মতো বৃহৎ দেশগুলোর পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গপোসাগরে পতিত হয়। ফলে বাংলাদেশ নামক ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতির সংযোজন ঘটানো জরুরি। ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে বাংলাদেশও ব-দ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত তেমন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। বছর বছর দেশে যে বন্যা দেখা দিচ্ছে, তা মোকাবিলা করে দেশের কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা ও মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার লক্ষ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা যুগোপযোগী করে সেটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।