শেরপুরে সরকারি প্রণোদনায় সরষে আবাদ

রফিক মজিদ, শেরপুর: দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকারের বিনা মূল্যে বীজ ও সার বিতরণের কারণে শেরপুরে সরষ্যের প্রায় দ্বিগুন আবাদ করা হয়েছে। কৃষকদেরও ব্যপক সারা মিলেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকও অধিক লাভের মুখ দেখার স্বপ্ন বুনছে।

স্বল্প সময়ে চাষ হয়, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় আমন ধান কাটার পর জমি পতিত না রেখে জমিতে সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকেরা। এতে করে কৃষকেরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকারের এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধিতে জেলার ৫টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার মোট ২৪ হাজার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষককে সরিষার বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার শ্রীবরদী ও নকলা উপজেলায় সবচেয়ে বেশী সরিষার চাষ হয়েছে। সদর উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতেও দেখা মেলে একই চিত্র। মাঠের পর মাঠ সরিষা খেতে হলুদ ফুল এসেছে। যেন হলুদ গালিচা বিছানো হয়েছে দিগন্তজুড়ে। তবে যারা দেরিতে বীজ বপন করেছেন সেই সরিষা খেতগুলোতে কেবল ফুল আসতে শুরু করেছে।

সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৬নং চর ও ৭নং চর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে অন্য চিত্র। এখানের অনেক কৃষক শীতকালীন সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য আগাম সরিষা চাষ করেছেন। সেই শাক বিক্রি করে আবার সরিষা উৎপাদনের জন্য নতুন করে বীজ বপন করছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৯০৭ হেক্টর জমি ছাড়িয়ে ১২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ অর্জিত হয়েছে। যা গত বছর অর্জিত হয়েছিলো ৭ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। এছাড়া সরকারী বিশেষ প্রনোদনা বিনা মূল্যে বীজ ও সার পেয়েছে প্রায় ২৪ হাজার কৃষক।

শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৬নং চর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানায়, আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আমি দেড় বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এর মধ্যে অর্ধেক জমি থেকে সরিষার শাক হিসেবে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি। বাকিটুকা রেখেছি তেল বানানোর জন্য।

শ্রীবর্দী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের ইন্দিলপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন জানায়, সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর সরিষার দাম বাড়বে খবর পেয়ে আমরা সবাই বেশি পরিমান জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করি দামও ভালো পাবো। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অনেক সময় যে কোন ফসলের উৎপাদন বাড়লে ব্যাবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে ফেলে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। আশা করি সরকার বিষয়টা দেখবে।

নকলা উপজেরার চন্দ্রকোনা এলাকার কৃষক রহিম মিয়া জানায়, আমি আমার এক একর জমির জন্য সরকার থেকে বীজ ও সার পেয়েছি। বীজ রোপন, নিড়ানি ও কামলা খরচ হয়েছে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। ভোজ্য তেলের দাম বেশী থাকায় এবার সরিষার দামও বেশী পাওয়া যাওয়ার আশা রয়েছে। সেক্ষেত্রে এবার শুরুতে যদি প্রতি মণ সরিষার দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা হয়। তবে আমি প্রায় এক লাখ টাকা সরিষা বিক্রি করতে পারবো। 

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস বলেন, তেলের ঘাটতি পূরণের জন্য এবং আমদানী নির্ভরতা কমাতে দেশে তেল ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। তেল ফসলের মধ্যে সরিষা অন্যতম। সরকার আগামী দুই বছরের মধ্যে সয়াবিনের উপর ৪০% চাপ কমাতে এবং সয়াবিন তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে জন্য সরিষা চাষের মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আমরা কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ সৃর্ষ্টির জন্য স্বল্প মেয়াদী রোপা আমন ধানের চাষ করার পরামর্শ দিয়েছি। যার ফলে কৃষক দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেটে সরিষা আবাদ করতে পেরেছে। এবার শেরপুরে সরিষা চাষে একটা বিপ্লব হবে বলে আশা করছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০