প্রতিনিধি, শেরপুর: সরকার ভোজ্যতেলে আমদানিনির্ভরতা কমাতে গত কয়েক বছর ধরে চাষিদের প্রণোদনাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে সর্ষে চাষে। এতে শেরপুরে দিন দিন বাড়ছে সর্ষের আবাদ। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে শেরপুরে সর্ষের আবাদ বেড়েছে প্রায় চারগুণ। কিন্তু এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় সর্ষের ফলন হয়েছে অনেক কম। সেই সঙ্গে দামও কমে গেছে অনেক। ফলে এবার সর্ষেচাষিরা লোকসানের মুখে পড়ে হতাশায় ভুগছে। তবে জেলা কৃষি বিভাগ কৃষকের এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলছে, বাজারে বর্তমানে দাম একটু কম হলেও ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। তবে আগামীতে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এতে কৃষকের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
সূত্র জানায়, প্রতি বছরের মতো এবারও গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শেরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা সর্ষের আবাদে হলুদে ছেয়ে যায়। গত পাঁচ বছর ধরে সরকার থেকে বীজ-সারসহ নানা প্রণোদনা দেয়ায় চাষিরাও আগ্রহী হয়ে ওঠে এ সর্ষে চাষে। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর সরকার জেলায় প্রায় ৩০ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দিয়েছেন। তাই এসব কৃষকের বাড়তি কোনো খরচ হয়নি।
এদিকে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সর্ষের আবাদ ঘরে তোলেন কৃষকরা। চন্দ্রকোনা গ্রামের সর্ষের চাষি সজীব মিয়া ও জয়নাল মিয়া জানায়, অন্যান্য বছর মৌসুমের শুরুতে সর্ষের দাম থাকে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ এবং কয়েক মাস পরে এর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র। শুরুতে দাম উঠেছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। গত দুই মাসে সর্ষে শুকিয়ে বর্তমানে দাম উঠেছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এই দর পতনের পাশাপাশি যোগ হয়েছে ফলন কম। তাই উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, ফলন কম এবং বাজার দর কম থাকায় প্রণোদনা না পাওয়া কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছে। শেরপুর জেলায় সবচেয়ে বড় সর্ষের হাট বসে নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা বাজারে। এ বাজার ঘুরে দেখা গেছে হতাশ কৃষকরা।
এবার কৃষকের আবাদ কম এবং দর কম থাকার কথা স্বীকার করেন হাটের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। চন্দ্রকোনা বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানায়, প্রতি বছর আমরা মৌসুমের শুরু থেকে সারা বছর সর্ষে ক্রয় করে তা শুকিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের সর্ষে মিলে বিক্রি করি। কিন্তু গত বছর তেল মিলের চাহিদা কম থাকায় লোকসান দিয়ে সর্ষে বিক্রি করতে হয়েছে আমাদের। তাই এবার গত বছরের চেয়ে কম দামে সর্ষে কিনছি লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে।
এ বিষয়ে শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস এবার সর্ষের দাম কম রয়েছে, এ কথা স্বীকার করলেও কৃষকদের ফলন কমের অভিযোগটি অস্বীকার করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে সর্ষের দাম আরও বাড়বে এতে কৃষকের লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নেই। এছাড়া সরকার সয়াবিন তেলের পাশাপাশি সর্ষে তেলের ওপর নির্ভরশীল হতে নানা প্রচারণা চালাবেন বলে জানায় এই কৃষি কর্মকর্তা।
সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে সর্ষে চাষে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছে, সেক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চাষিদের আগামীতে সর্ষে চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণ ও চাষিদের প্রণোদনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সর্ষে তেলের ওপর নির্ভরশীল হতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল।