শেরপুর, রফিক মজিদ : শেরপুর জেলার সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে একটি নির্মাণাধীন হাফ বিল্ডিং ঘরের কাজ করার সময় রাজমিস্ত্রী উস্তাগার মো. মজনু মিয়ার সাথে প্রতিবেশি দোকানী আপন ও বিল্লাল হোসেনের সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরে মজনু মিয়াকে মারধর করায় সে অসুস্থ হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। নিহত মজনু মিয়া সদর উপজেলার হাওড়া গড় এলাকার বাসিন্দা মৃত পিঙ্গিল মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে। সে তিন সন্তানের জনক এবং তার স্ত্রী গর্ভের আরেক সন্তান রয়েছে।
এঘটনায় শেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করছে মজনু মিয়ার পরিবার। তবে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় ঘটনায় জড়িত না থাকা কিছু মানুষকে মামলায় জড়ানো সহ অভিযুক্তদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লোট করেছে। এ বিষয়ে হাওড়া বিশ্ব বাজার এলাকার মৃত রুস্তম আলীর দুই ব্যবসায়ী ছেলে হাসান (৪৫) ও কামাল হোসেন (৩৮) কে মিথ্যাভাবে আসামী করা হয়েছে বলে ওই সহোদর অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ বলছেন, তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদেরই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে হাওড়া বিশ্ব বাজার এলাকায় শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশের্ব জনৈক মঞ্জুরুল হক মঞ্জুর একটি নির্মাণাধীন হাফ বিল্ডিং ঘরের কাজ করছিল রাজমিস্ত্রী মো. মজনু মিয়া। কাজের এক পর্যায়ে ওই বিল্ডিংয়ের প্লাস্টারে পানি ছিটানোর সময় একটু পানি একই এলাকার প্রতিবেশি এরশাদ আলীর ছেলে আপনের মুরগীর দোকান ও বিল্লাল হোসেনের মুদি দোকানে একটু পানি দোকান ঘরে গেলে এনিয়ে মজনু মিয়ার সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরে আপন ও বিল্লাল মজনু মিয়াকে কিলঘুষি মারে এবং এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে প্রথমে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মজনু মিয়া মারা যায়। এঘটনার জের ধরে ওইদিন এরশাদ আলীর ছেলে আপন, বিল্লাল হোসেন, রাজবাহাদুর, দুলাল, মাজাহার ও চাঁন মিয়ার ছেলে ফিরোজের সারের দোকানসহ বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র তছনছ এবং ঘরে থাকা টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করে নিয়ে যায়। এছাড়া এসময় ৫টি গরু ও ৫টি ছাগল নিয়ে যায় তারা।
পরবর্তীতে নিহত মজনু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা বেগম বাদী হয়ে ১৩ জনকে চিহ্নিত ও ৫/৭ জন অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে শেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় মৃত রুস্তম আলীর দুই ছেলে হাসান ব্যবসায়ী কাজে নালিতাবাড়ী, কামাল হোসেন শেরপুর শহরের থানার মোড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকলেও শুধু আপন ও বিল্লাল হোসেনদের আত্মীয়র সুবাদে এবং হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতেই ওই হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
নিহতের স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী সেখানে কাজ করতে গিয়ে হত্যার স্বীকার হয়েছে। আমাদের সাথে কারও কোন ঝামেলা ছিলোনা। আমি এখন ৩টি সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবো। আমার পেটে আরও একটি সন্তান রয়েছে। সে তার বাবাকে একবার দেখতেও পারলো না। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমার স্বামীর হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের সকলের ফাঁসি চাই আমি।
এব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মজনু মিয়ার মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। সেই সাথে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে যেটাই বলুক অহেতুক কাউকে হয়রানী করা হবেনা।