Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:16 am

শেরপুর গারো পাহাড়ে এবার বাঘ আতঙ্ক

রফিক মজিদ, শেরপুর: শেরপুরের গারো পাহাড়ে হাতির পর এবার বাঘের আক্রমণ শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে সীমান্তের প্রায় পাঁচ গ্রামে গরুসহ প্রায় ২০টি ভেড়া ও ছাগল বাঘের পেটে গেছে। ফলে ওইসব গ্রামের মানুষ এখন বাঘ আতঙ্কে রয়েছেন। বাঘগুলো দেখতে শেয়ালি রঙের এবং লম্বায় প্রায় চার ফুট ও উচ্চতায় প্রায় তিন ফুট। এটি ভারতীয় কেরাকেল প্রজাতির বাঘ বলে বন বিভাগ সূত্র জানায়।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় কেরাকেল প্রজাতির এ বাঘ মেঘালয় রাজ্যে দেখা পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে শেরপুর সীমান্তের গ্রামগুলোয় সম্প্রতি এ কেরাকেল প্রজাতির বাঘের দেখা মিলেছে। বাঘটি দেখতে হুবহু বেড়ালের মতো। কানগুলো বেশ লম্বা। তবে উচ্চতা ও দৈর্ঘ্য অনেকটা চিতাবাঘের মতোই। বনের ছোট ছোট প্রাণী যেমন ছাগল, ভেড়া, বনমোরগ, খরগোশ, ইঁদুরসহ অন্যান্য পাখি শিকার করতে এরা বেশ পটু।

সম্প্রতি শেরপুরের ওইসব গ্রামের বনে প্রকাশ্যে দিনের বেলাতেই ওই বাঘ বনবাদাড়ে ঘোরাফেরা করছে এবং বিভিন্ন বাড়িতে হামলা দিয়ে ছাগল ও ভেড়া নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। পরে গভীর জঙ্গলে ওই ছাগল ও ভেড়ার নাড়ি-ভুঁড়ি পড়ে থাকতে দেখছে গ্রামবাসী। হঠাৎ করে এ পাহাড়ে বাঘের আগমনের বিষয়ে স্থানীয় বন বিভাগ বলছে, উজার হওয়া বনভূমি সম্প্রতি কৃত্রিম বনায়ন ও প্রাকৃতিকভাবে গভীর বনায়ন হওয়ায় ভারতের মেঘালয় থেকে এ গারো পাহাড়ে হয়তো বাঘের আগমন হয়েছে। পরে তারা দেশের বনভূমির সঙ্গে বাড়িগুলোর গৃহপালিত গবাদি পশুর ওপর হামলা চালাচ্ছে। এ বনে শুধু এ বাঘই নয়, লেপাট প্রজাতিরও বাঘের আগমন ঘটেছে বলে সূত্র জানায়। এছাড়া এক সপ্তাহ আগে এ বন থেকে একটি অজগর সাপ লোকালয়ে বেরিয়ে পড়লে বন বিভাগ আবার সেই সাপটিকে গভীর জঙ্গলে অবমুক্ত করে। এর আগে ২০১৬ সালে জেলার শ্রীবর্দী উপজেলায় একটি লেপাট বাঘ লোকালয়ে এলে ওই সময় স্থানীয় মেয়রসহ ১০ জনকে আহত করে বাঘটি।

বন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে গভীর জঙ্গল থাকলেও একশ্রেণির বনদস্যুর কবলে পড়ে স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে নব্বই দশক নাগাদ উজাড় হয়ে যায়। পরে সরকার বনভূমি রক্ষায় বেশ কিছু উজার বনভূমিতে বনায়ন করে এবং বেশ কিছু এলাকা প্রাকৃতিকভাবেই গভীর জঙ্গলে পরিণত হয়। ফলে ভারত থেকে বন্যহাতি এসে আবাসস্থল গড়ে তুলে সীমান্তের গ্রামগুলোর ফসল ও বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে হতাহত করে। বিনষ্ট করে শত শত মানুষের বাড়িঘর। ফলে সীমান্তবাসী দীর্ঘদিন থেকেই হাতির আতঙ্কে রয়েছে।

এক সপ্তাহ ধরে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকূড়া, পশ্চিম বাকাকূড়া, গান্ধিগাঁও, হালচাটি ও ছোট গজনি গ্রামের পর্যটন কেন্দ্র ‘অবকাশ’-এর আশাপাশে বাঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে। ওইসব গ্রামের বনের ভেতর এবং বনের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন গ্রামে যাওয়ার রাস্তার ওপর এবং গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ছাগল-ভেড়ার ঘাড়ে কামড়ে ধরে চম্পট দিচ্ছে। এসব ঘটনা বেশিরভাগই প্রকাশ্যে দিনের বেলা এবং ছাগল-ভেড়ার মালিকদের সামনেই ঘটছে। আবার অনেক সময় থাবা মেরে ছাগল নিয়ে যাওয়ার সময় ছাগলের মালিক ও গ্রামবাসীরা হইচই শুরু করে বাঘকে লাঠিসোটা ও দা নিয়ে ধাওয়া করলে আহত ছাগল ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয় বাঘ। হালচাটি গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, তার দুটি ছাগল বাঘের পেটে গেছে। এছাড়া পাশের গ্রামের একটি গরুর বাছুরকেও ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় লোকজনের ধাওয়ায় বাঘটি পালিয়ে যায়। গত সাত দিনে ওই পাঁচ গ্রামের কমপক্ষে ২০টি ছাগল-ভেড়া বাঘের পেটে চলে গেছে।

বন ও বনের আশপাশে বাঘের আক্রমণের বিষয়ে রাংটিয়া ও গজনি বিটের বিট কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ জানান, সম্প্রতি গারো পাহাড়ে গভীর জঙ্গল বা বনায়ন হওয়ায় হাতির মতো বাঘেরও আগমন ঘটেছে। তবে আমরা গ্রামবাসীদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছি। প্রয়োজনে আমরা মাইকিং করে প্রচারণা চালাব, যাতে গ্রামবাসী আরও সজাগ থাকেন এবং সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করেন।