ক্রীড়া প্রতিবেদক:দ্বিতীয় দিনের খেলা বাকি মাত্র ৪ ওভার। কোনোমতে খেলে গেলেই হয়ে যায়। তাতে ২ উইকেট হারিয়ে ভালো একটা স্কোর নিয়ে দিন শেষ করতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু ওই যে শেষবেলা! এটা এলেই যেন কী থেকে কী হয়ে যায় টাইগারদের। প্রথম দিনে যেটা করেছিলেন বোলাররা, গতকাল সে কাজটাই করে দেখালেন ব্যাটসম্যানরা। ৬ রানের মধ্যে সফরকারীরা হারিয়ে বসে তিন উইকেট। মানে দিন শেষে মুশফিকুর রহিমের দলের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২১৪ রান। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে করা ২৩৮ রান থেকে হাথুরুসিংহের শিষ্যরা এখনও পেছনে ১২৪ রানে। উইকেটে রয়েছেন সাকিব আল হাসান (১৮) ও মুশফিকুর রহিম (২)।
অথচ উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকার নিজেদের সহজাত খেলা খেলে দলের স্কোরবোর্ডকে সচল রাখেন। রঙ্গনা হেরাথের বলে হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থেকে তামিম ইকবাল এলবিডব্ল– হওয়ার আগে বাংলাদেশ ওপেনিং জুটিতে তুলে ফেলে ৯৫ রান। এরপর ইমরুল কায়েসকে নিয়ে ভালোমতোই খেলছিলেন সৌম্য। টেস্টে এই বাঁহাতি তুলে নেন টানা তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। তবে গল টেস্টের মতো গতকালও নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি তিনি। সান্দাকানের গুগলিতে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাজঘরে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করা সৌম্য। তারপরও ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি হওয়া ইমরুলকে নিয়ে দারুণ খেলছিলেন সাব্বির রহমান। মনে হচ্ছিলো এ জুটিই দ্বিতীয় দিনটি কাটিয়ে দেবে। কাজটাও তাদের জন্য খুব একটা কঠিন ছিল না। দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটি যোগ করে ৬২ রান। তখনই সান্দাকানের বলে সুইপ করতে গিয়ে ইমরুল পড়লেন এলবিডব্ল–র ফাঁদে। পরের বলে আবারও সান্দাকান ব্যবহার করলেন তার ধারালো অস্ত্রটাইÑগুগলি! তাইজুল সেটা পড়তে পারলেন না! এরপর সুরঙ্গা লাকমালের শর্টবলে সাব্বির পুল করতে গিয়ে পরাস্ত হলেন গতিতে। লেগ গালিতে ফিল্ডার আনাই হয়েছিল এই শটের জন্য। ডি সিলভা সেই ক্যাচ ধরতে মোটেও ভুল করলেন না।
সাব্বিরের বিদায়ের পর সাকিবের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিলো বুঝি তিনি টি-টোয়েন্টি খেলছেন। যেন চার-ছক্কা চাই তার প্রতি বলেই! এর মধ্যে ক্যাচ মিস করায় ১১ রানে বেঁচে গেলেন উপুল থারাঙ্গা। আরেকবার অল্পের জন্য হলেন না ক্যাচ আউট। তারপরও সাকিবের থামাথামি নেই। শেষ পর্যন্ত থামতে বাধ্য হলেন দিনের খেলা শেষ হওয়ায়। তবে তার ব্যাটিংয়ে জাগিয়ে রাখলো শঙ্কাও। এভাবে খেলতে থাকলে আউট
হতে কতক্ষণ? ৮ বলে ১৮ রানের টি-টোয়েন্টি ইনিংসে অপরাজিত এ বাঁহাতি। মুশফিক অপরাজিত ২ রানে।
এর আগে গতকাল শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয় আগের দিনের ২৩৮ রানের সঙ্গে আরও ১৪৩ রান যোগ করে। দিনেশ চান্দিমাল তুলে নেন অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরিটি। যা করতে তার লেগেছে ২২৪ বল। তাইজুলের বলে কভার ও পয়েন্টের মাঝামাঝি ঠেলে দিয়েই তুলে নেন সেঞ্চুরিটি। মাইলফলক পেরিয়েই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। ৩০০ বল খেলে শেষ পর্যন্ত ১৩৮ রানে এ ডানহাতি ফিরেছেন মেহেদি হাসান মিরাজের বলে, মিড উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
৭ উইকেটে ২৩৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা প্রথম সেশনটাকে পুরোপুরি নিজেদের করে নেয়। অষ্টম উইকেটে হেরাথের সঙ্গে চান্দিমাল যোগ করেন ৫৫ রান। তিনি আরও ৫৫ রান যোগ করেন নবম উইকেটে সুরাঙ্গা লাকমালকে নিয়েও। বাংলাদেশের হতাশাটা আকাশে তুলে দিয়েছেন লাকমল। ৪৪ বলে ৩৫ রান করেন তিনি। লক্ষ্মণ সানদাকানের সঙ্গে শেষ উইকেটে যোগ করেন আরও ৩৩ রান। লাকমালকে থার্ডম্যানে সৌম্যর ক্যাচে ফিরিয়েছেন শুভাশিস। বাংলাদেশের হয়ে ৯০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও শুভাশিস রায়Ñতিনজনই নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। তাইজুল নিয়েছেন ১ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১১৩.৩ ওভারে ৩৩৮ (চান্দিমাল ১৩৮, লাকমাল ৩৫, ডিকভেলা ৩৪, ধনঞ্জায়া ৩৪, হেরাথ ২৫; মিরাজ ৩/৯০, মোস্তাফিজ ২/৫০, শুভাশিস ২/৫৩, সাকিব ২/৮০, তাইজুল ১/৪০)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬০ ওভারে ২১৪/৫ (সৌম্য ৬১, তামিম ৪৯, সাব্বির ৪২, ইমরুল ৩৪, সাকিব ১৮*, মুশফিক ২*; সান্দাকান ৩/৬৫, লাকমাল ১/৩২, হেরাথ ১/৩৪)