মো. আসাদুজ্জামান নূর: পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের মধ্যে আসন্ন রমজান মাসে মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের বড় বিনিয়োগের ঘোষণার পরদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন এক হাজার কোটি টাকা ছাড়াল। এদিন লেনদেনের অর্ধেক সময় পর্যন্ত সূচক কমতে থাকলেও শেষ পৌনে ১ ঘণ্টায় হারানো দর ফিরে পায় কোম্পানিগুলো। দিন শেষে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা গত ১৬ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ। সেদিন এক হাজার ২১৩ কোটি ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল। এর আগে সর্বশেষ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল গত ১৫ মার্চ। সেদিন হাতবদল হয়েছিল এক হাজার ৬৫ কোটি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
গতকালের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ট্যানারি খাত। খাতটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩.৯ শতাংশ। এরপরই প্রকৌশলে ১১.৬, কাগজ ও মুদ্রণ খাতে ১০.১ শতাংশ, আইটি ১০, ওষুধ ও রসায়ন ৮.৬, বস্ত্র ৮ ও খাদ্য খাতে ৬.২ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের লেনদেন ছয় শতাংশের নিচে ছিল।
গত সেপ্টেম্বর থেকে দর সংশোধনে থাকা পুঁজিবাজার চলতি বছরের শুরুতে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েও ভালো করতে পারেনি। এর মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হলে দেখা দেয় আতঙ্ক। এক পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে না গিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।
দরপতন ঠেকাতে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশে নামিয়ে আনার পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ানো ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসি। পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতেও বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় সংস্থাটি। এত কিছুর পরও লেনদেনের এক পর্যায়ে ৬০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বুধবার বৈঠকে বসে বিএসইসি।
বৈঠক শেষে রোজায় বিনিয়োগ বাড়ানোর সুস্পষ্ট ঘোষণা আসে। বলা হয়, প্রতিটি ডিলার অ্যাকাউন্টে রমজান মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবে। এতে পুঁজিবাজারে নতুন ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওর মাধ্যমে রমজান মাসে নতুন করে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সমিতি বিএমবিএর সভাপতি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।
আবার পুঁজিবাজারের জন্য বিএমবিএ যে ১০ হাজার কোটি টাকা তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, সে বিষয়েও বিএসইসি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে লেনদেনের শুরুতে শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকে। লেনদেনও কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে হতাশা আরও গাঢ় হতে থাকে। দুপুর সোয়া ১২টার দিনে সূচক আগের দিনের চেয়ে কমে যায় ২৩ পয়েন্ট। সেখান থেকে কিছুটা বাড়লেও বেলা পৌনে ২টার সময়ও সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৭ পয়েন্ট কম ছিল। শেষ পৌনে ১ ঘণ্টায় সেখান থেকে সূচক বাড়ে ২৭ পয়েন্ট। তবে একেবারের শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে আগের দিনের চেয়ে ৪ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন।
তবে সূচক বাড়লেও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর হারিয়েছে। বেড়েছে ১৩৪টি কোম্পানির দর। বিপরীতে কমেছে ১৮৩টি। অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৬২টি কোম্পানির শেয়ারদর।
কোম্পানির শেয়ারের ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকরা ধারণ করবেন, এক দশক আগে করা এমন একটি বিধান কার্যকরে কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরের চিঠির পরদিন বুধবার এই খাতের কোম্পানির শেয়ারদর লাফালেও পরের দিনই দর হারিয়েছে বেশিরভাগ। আগের দিন এ খাতের ৪০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছিল ৩৯টিরই। একটির দর ছিল অপরিবর্তিত। দ্বিতীয় দিনই এই কোম্পাগুলোর ২০টি দর হারিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির ক্রেতাই ছিল না। আগের দিন সর্বাধিক দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৯টিই ছিল বিমা খাতের। এদিন এই ১০টির মধ্যে একটি এই খাতের।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন খাতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। খাদ্য, আর্থিক, প্রকৌশল খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। ব্যাংক খাতে দুটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২২টি।