শেষ তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে রেমিট্যান্স প্রেরণে শীর্ষে সৌদি আরব

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায়ী অর্থবছরের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কিন্তু শেষের দিকে এসে সেই প্রবণতা কমে গেছে। শেষ তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। একই সময় সৌদি আরব থেকে এসেছে ১০০ কোটি ডলার। শেষ তিন মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার ফলে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাম দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে। অর্থবছর শেষে আবার বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে সবার ওপরে উঠে এসেছে সৌদি আরব।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি চলছে। আয়ের উৎস ও নথিপত্র চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া ওই দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা কম টাকা পাঠাতে পারছেন। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১০০ কোটি ডলার পাঠান। একই সময় সৌদি আরব থেকে ৯৯ কোটি ডলার এসেছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর এই তিন মাসও যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসীরা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠান। ওই তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯৬ কোটি ও সৌদি থেকে ৯১ কোটি ডলার পাঠান প্রবাসীরা।

তবে পরবর্তী ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সৌদি আরবের প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা ৮৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। একই সময়ে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৮৫ কোটি ডলার। আর শেষ তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৭২ কোটি ডলার আর সৌদি থেকে এসেছে ১০০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের চার প্রান্তিকের মধ্যে শেষ প্রান্তিকে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

কাজের উদ্দেশে গত দুই বছরে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে গেছেন। এর পরও অর্থবছরের শুরু থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকে। বিপরীতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ বাড়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের শীর্ষস্থানে উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। গত বছরের মার্চ পর্যন্তও দেশটি থেকে রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। কিন্তু এপ্রিল, মে ও জুন মাসে প্রবাহ কমতে শুরু করে। টানা তিন মাস যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় আবার অর্থবছর শেষে শীর্ষস্থানে উঠে আসে সৌদি আরব।

বিদায়ী অর্থবছরের ১২ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ৩৫২ কোটি ডলার এসেছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৯ কোটি ডলার বেশি। ওই অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে ৩৪৩ কোটি ডলার।

বিদায়ী অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৩৭৬ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরেও সৌদি থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ওই অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ৪৫৪ কোটি ডলার আসে, যা বিদায়ী অর্থবছর থেকে ৭৮ কোটি ডলার কম।

এছাড়া শীর্ষে থাকা ১০ রেমিট্যান্স পাঠানো দেশের মধ্যে রয়েছেÑআরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, ইতালি, মালয়েশিয়া, ওমান এবং বাহরাইন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। এ হিসেবে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৫৮ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এক অর্থবছরে রেমিট্যান্সের রেকর্ড হয় ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছর প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান।

রেমিট্যান্সের চাঙ্গাভাবের মধ্যে ঈদের আগে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণের ৫২ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে আবার ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। মাঝে যা ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। তবে আজ বুধবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মে-জুন সময়ের দায় পরিশোধে যাবে ১০৯ কোটি ডলার। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ৩০ বিলিয়ন ডলারে নামবে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে হঠাৎ কেন রেমিট্যান্স বেড়েছে তা আগে খতিয়ে দেখা উচিত। এরপর কেন কমেছে। হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, আবার তা কমে যাওয়া। এটা একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এসব বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালোভাবে মনিটরিং করা উচিত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০