শেষ দুই ঘণ্টার আক্ষেপ বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক: কৃষ্ণচূড়ার ডালে রঙ লেগেছে। বৃক্ষরাজি থেকে পুরোনো পাতা ঝরে গজিয়েছে নতুন পাতা। কোকিলের মিষ্টি সুরের কুহুতানে প্রকৃতি হয়েছে মুখরিত। সবার মনে দোলা দিয়েছে ঋতুরাজ বসন্তের ছোঁয়া। কিন্তু এমন দিনে বাংলাদেশের প্রথম ভারত সফর শেষ হয়েছে হতাশাতেই। সঙ্গে ছিল শেষ দুই ঘণ্টার আক্ষেপও। মিডেল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা একটু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে উইকেটে আঁকড়ে পড়ে থাকলে এ টেস্ট ড্র করা অসম্ভব ছিল না সফরকারীদের। হায়দরাবাদে গতকাল ব্যাটসম্যানদের ‘আত্মহত্যায়’ মুশফিকুর রহিমের দল ২০৮ রানে হেরেছে ঐতিহাসিক টেস্ট।

অথচ মিডলঅর্ডারের সব ব্যাটসম্যানই পেয়েছিলেন ভালো শুরু। কিন্তু একমাত্র মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া আর কারোর মধ্যেই দেখা যায়নি লম্বা সময় ধরে উইকেটে পড়ে থাকার মানসিকতা। তারই সুবিধা নিয়ে দুই সেশনের মধ্যেই বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিয়ে ঐতিহাসিক টেস্ট জিতে নেয় ভারত। তবুও ভালো ফলোঅনে পড়লেও টাইগারদের ব্যাটিংয়ে পাঠাইনি ভারত। যদি তাই হতো, তাহলে ইনিংস ব্যবধানে হারতো টিম টাইগার্স। হয়তো এই সফরে এটাই বড় পাওয়া, আমরা ইনিংস ব্যবধানে হারিনি!

এদিকে হায়দরাবাদ থেকে একেবারে খালি হাতেও ফিরছে না বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক টেস্টে ভারতের দেওয়া ৬৮৭ রানে পিষ্ট হয়ে আগেই আত্মসমর্পণ করেননি মুশফিকরা। ম্যাচটাকে প্রায় শেষ সেশন পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছে সফরকারী দল। চতুর্থ ইনিংসে ভারতের মাটিতে অশ্বিন-জাদেজার স্পিনের সামনে ১০০ ওভার ব্যাট করাটাও কম কৃতিত্বের নয়।

এ ম্যাচে ড্র করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু চতুর্থ দিনের শেষ বিকালে সফরকারীরা টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদে পড়েছিল। তবে ভরসার প্রতীক হয়ে ছিলেন সাকিব আল হাসান-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জুটি। বিশেষ করে সাকিবের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। কিন্তু পঞ্চম দিনের সকালের শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। রবীন্দ্র জাদেজার ফুটমার্কে পড়া অনেকটা লাফিয়ে ওঠা টার্নিং বলে খুব বেশি কিছু করার ছিল না এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। গ্লাভসে লেগে শর্ট লেগে সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করে তার ফেরা নিশ্চিত করেন চেতেশ্বর পূজারা। এরপর বিরাট কোহলির চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান গতকালও খেলছিলেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। মাহমুদউল্লার সঙ্গে ৮৪ বলে গড়েন ৫০ রানের জুটি। কিন্তু অশ্বিনের বলে একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী শট খেলতে গিয়েই পড়লেন বিপদে। বলা যায় উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক। এগিয়ে এসে উড়িয়ে খেলার চেষ্টায় মিডঅফে জাদেজাকে সহজ ক্যাচ দেন তিনি।

মুশফিকের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন মাহমুদল্লাহ রিয়াদ। সপ্তম উইকেট জুটিতে সাব্বির রহমানের ব্যাটে প্রতিরোধটা ভালোই গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু ১৮ ওভার স্থায়ী ৫১ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটিটির সেই প্রতিরোধ ভেঙে দেন ইশান্ত শর্মা। সাব্বিরকে ফেরান এলবিডব্ল–র ফাঁদে। এরপরই স্বস্তি ফেরে ভারত শিবিরে। কিছুক্ষণ পরই মাহমুদল্লাহকে ফেরান সেই ইশান্ত। ১৪৯ বলে ৬৪ রান করে ইশান্তের বলে ভুবনেশ্বর কুমারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৯ মাস পর টেস্টে ফিফটি পাওয়া এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের হারটা তখন হয়ে দাঁড়ায় কেবল সময়েরই ব্যাপার। তারপরও কিছু আশা দেখাচ্ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কামরুল ইসলাম রাব্বিকে নিয়ে চা বিরতির আগ পর্যন্ত লড়াই করেন এ ডানহাতি। শেষ পর্যন্ত শেষ সেশনের বিরতির আগেই অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা।

ভারত সফরে প্রথম টেস্টে ড্র করতে পারলে তা হতো বাংলাদেশের জন্য জয়ের সমান। হয়তো সেটাই হতো। যদি না ফিল্ডিংয়ে পাওয়া সুযোগগুলো মিস না করতো সফরকারীরা। এই হতাশাতায় শেষ পর্যন্ত পুড়তে হয়েছে মুশফিকুর রহিমের দলকে। তারপরও ঐতিহাসিক এ সফরে যতটুকু অর্জন করছে টাইগাররা, তাই জ্বালানি হিসেবে হয়তো কাজ করবে আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত ১ম ইনিংস: ১৬৬ ওভারে ৬৮৭/৬ ইনিংস ঘোষণা (বিজয় ১০৮, পূজারা ৮৩, কোহলি ২০৪, রাহানে ৮২, ঋদ্ধিমান ১০৬*, অশ্বিন ৩৪, জাদেজা ৬০*; তাসকিন ১/১২৭, মিরাজ ২/১৬৫, তাইজুল ৩/১৫৬)। এবং ভারত ২য় ইনিংস : ১৫৯/৪ ইনিংস ঘোষণা (পূজারা ৫৪, কোহলি ৩৮, রাহানে ২৮; তাসকিন ২/৪৩, সাকিব ২/৫০)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১২৭.৫ ওভারে ৩৮৮/১০ (তামিম ২৪, সৌম্য ১৫, মুমিনুল ১২, মাহমুদউল্লাহ ২৮, সাকিব ৮২, মুশফিক ১২৭, সাব্বির ১৬, মিরাজ ৫১; ভুবনেশ্বর ১/৫২, ইশান্ত ১/৬৯, অশ্বিন ২/৯৮, যাদব ৩/৮৪, জাদেজা ২/৭০) এবং বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১০৩.৩ ওভারে ২৫০/১০ (সৌম্য ৪২, মুমিনুল ২৭, মাহমুদউল্লাহ ৬৪, সাকিব ২২, মুশফিক ২৩, সাব্বির ২২, মেহেদী ২৩; অশ্বিন ৪/৭৩, জাদেজা ৪/৭৮, ইশান্ত ২/৪০)

ফল: ভারত ২০৮ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা: বিরাট কোহলি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০